• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ধামরাইয়ে

অবৈধ ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ১১:৩১ পিএম

অবৈধ ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি, দুষিত হচ্ছে পরিবেশ

ছবিঃ সিটি নিউজ ঢাকা

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার প্রতিনিধি

সাভার ও ধামরাইয়ে ইটভাটার সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে। তবে ইটভাটার মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভার ও ধামরাইয়ে প্রায় ৩০০ ইটভাটা রয়েছে, যার অধিকাংশই অবৈধ। আদালতের নির্দেশের পরেও এসব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অবৈধ ইটভাটাগুলো দিব্যি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার ধামরাই  উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের কালামপুর বাটুলিয়া এম.এস.ব্রিকসে কয়লার পাশাপাশি লাকড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এইদিকে ধামরাই কালামপুরের এম.এস.ব্রিকস ও এম এফ.ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মো.আনুছুর রহমান খান (বাবু) বলেন, আমাদের ইট ভাটার অনুমোদন নাই তাতে কি হইছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তো ছিল, ইট ভাটা নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা দিছি নতুন করে অনুমোদন পাই নাই। তাহলে কিভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে,তিনি জানান প্রশাসনিকভাবে তাদের বলা হয়েছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাদের কাগজ আছে তারা ব্যবসা চালাতে পারবে তাদের নিবন্ধন করতে সুযোগ দিছে। লাকড়ি পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাই উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর অবৈধ "খান বিক্সস "ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা করায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ধামরাই উপজেলার কালামপুর, ডাউটিয়া, জলসিন কুল্লা ও বাসনা এলাকার ১৮টি ভাটায় জরিমানাসহ ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় ভাটাগুলোর কার্যক্রম চলছে।

ভেঙে দেওয়া ভাটা পুনরায় চালু প্রসঙ্গে মেসার্স খান ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবদুল জলিল বলেন, প্রতি মৌসুমে প্রায় চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। মৌসুম চলাকালে ভেঙে দিলে কি কেউ এত টাকা লোকসান দিতে চাইবে? তাই ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে ঠিক করতে। ঠিক করার পর আবার শুরু করা হয়। তিনি আরও জানান, ভাটার মালিক বলেছেন, সামনের বছর ভাটা বন্ধ করে দেবেন।        

       

হাইকোর্ট ২০১৯ সালে তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে নদকে দূষণমুক্ত করার নির্দেশ দেন। এ বছর অপর এক আদেশে হাইকোর্ট রাজধানীর চারপাশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনা থাকার পরেও রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়া বাজারের পাশ দিয়ে প্রবহমান তুরাগ নদের তীরে গড়ে ওঠা ইটভাটা মেঘনা ব্রিকস, আল-আশরাফ ব্রিকস, রাজু ব্রিকস, আশুলিয়া ব্রিকস ও সুরমা ব্রিকস ইট পুড়িয়ে নদী ও বায়ুদূষণ করে চলেছে।  

ভাটায় অভিযান প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, লোকবল কম থাকায় ‍‍`সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সমন্বয়ে আমাদের এ কাজটি করতে হয়। তাই সবার সহযোগিতা না পেলে অভিযান পরিচালনা করাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।’  

ভাটা বন্ধের পর চালু করা প্রসঙ্গে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভেঙে আগুন নিভিয়ে দিয়ে আসি। এরপর তারা শুরু করলে, সে তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আসলে কিছুই করার থাকে না। এম.এস.ব্রিকস ও এম এফ.ব্রিকসের   নিবন্ধন নাই তারা অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে।’

গত ২১ মার্চ মেসার্স এন আর ব্রিকসের চিমনি ভেঙ্গে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। এরপরও আইন আমান্য করে টিন দিয়ে চিমনি তৈরি করে ইটপুড়ানো হচ্ছে। 

জানতে চাইলে ধামরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ‘আমরা ইটভাটা ভেঙে দিই, তাঁরা ঠিক করে আবার চালান। জেল-জরিমানার ঝুঁকির মধ্যে এভাবেই ভাটাগুলো চলছে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ইটভাটা ধ্বংস করা সম্ভব নয়।’

লোকালয়ের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ