• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

মোংলাবন্দর চ্যানেলে কার্গোডুবি নিয়ে বসলো তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম

মোংলাবন্দর চ্যানেলে কার্গোডুবি নিয়ে বসলো তদন্ত কমিটি

মোংলা প্রতিনিধি

মোংলা সমুদ্রবন্দরের হারবাড়িয়া নৌ-চ্যানেলে সার বোঝাই কার্গো জাহাজডুবির ঘটনায় চালকের গাফিলতিকেই মূল কারণ হিসেবে দেখিয়েছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দেয়া প্রাথমিক ওই তদন্ত প্রতিবেদন শিগগিরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এরপর মূল চ্যানেল রেখে গাফিলতির অভিযোগে দায়ী মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায় মোংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ। তবে এই মুহূর্তে নৌ দুর্ঘটনায় বন্দরের নৌ-চ্যানেলে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) মধ্যরাতে হারবাড়িয়া এলাকায় সার নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেসের মাস্টার (চালক) ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি পাওয়া গেছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই সময় ঘন কুয়াশা থাকায় মাস্টারের উচিত ছিল কার্গো জাহাজটি না চালিয়ে কোনো এক জায়গায় অবস্থান করা। কিন্তু মাস্টার সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হারবাড়িয়া-৯ এ অবস্থান করা ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ নামে বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ টন সারবোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এরপরে পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৫ এ অবস্থান করা অন্য আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘সুপ্রিম ভ্যলো’র টার্ন করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে সেটিতে ধাক্কা লাগায় শাহ জালাল এক্সপ্রেস কার্গোটি। ওই সময়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কার্গোটি ডুবে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কিন বয়া (লাল সতর্ক বয়া) বসিয়ে তদন্ত শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাৎ হোসেন, পাইলট ফারুক আহাম্মেদ এবং মেরিন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. রিয়াদ খান এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এমভি শাহ জালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের মালিক আজাহার সিদ্দিক দাবি করেন, কার্গোটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাস্টার ওবায়দুর রহমানের কোনো গাফিলতি ছিল না। তিনি একজন দক্ষ চালক।
বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার যে কারণ উল্লেখ করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে আজাহার সিদ্দিক বলেন, কোনো বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই হওয়ার পর সেখানে এক মুহূর্ত থাকতে দেয় না শ্রমিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা। কার্গোবোঝাই শেষ হলে সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেয়ার জন্য ঘন কুয়াশাতেও মাস্টারের কার্গোটিকে চালাতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই জাহাজটি ওঠানো সম্ভব না। কারণ হারবাড়িয়া এলাকা অনেক গভীর। তাই অনেক সময় লাগবে। ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে সার অপসারণ করতে এখনো এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হারবাড়িয়া নৌ চ্যানেলে সারবাহী কার্গো জাহাজডুবির ফলে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হবে এবং ওই জাহাজে থাকা যে জ্বালানি তেল রয়েছে সেগুলো সুন্দরবনের আশপাশের পরিবেশকে দূষিত করবে। একইসঙ্গে বারবার এসব ট্যাংকার, লাইটার বা কার্গো জাহাজডুবির ফলে বন্দরের নাব্য সংকট বৃদ্ধি পাবে।


উল্লেখ্য, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোংলা বন্দরে হারবাড়িয়া চ্যানেলে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে শাহ জালাল এক্সপ্রেক্স কার্গো জাহাজটি ডুবে গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ওই জাহাজে থাকা মাস্টারসহ ৮ নাবিক। কার্গো জাহাজটিতে বহন করা সার বাংলাদেশ এগ্রিকালচার করপোরেশনের (বিএডিসি) বলে জানা গেছে। 

 

এনএমএম/এএল
 

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ