• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উপহারের কবুতরে ভাগ্য ফিরিয়েছেন পানজোরা গ্রামের রুবেল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৫:০৯ পিএম

উপহারের কবুতরে ভাগ্য ফিরিয়েছেন পানজোরা গ্রামের রুবেল

গাজীপুর প্রতিনিধি

কবুতর পালন করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের উদ্যমী যুবক রুবেল সিকদার (৩৪)। বছর দুই আগেও বেকার ছিলেন। মাঝে মধ্যে কিছু কাঁচা শাক-সবজি ঢাকায় নিয়ে যেতেন। আর তা দিয়ে যা ব্যবসা হতো তাতেই পরিবার স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে কোন মতে দিন পার করতেন।

রুবেল সিকদার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোরা গ্রামের আব্দুল কাদির সিকদারের ছেলে। তিনি শোনালেন তার দিন বদলের গল্প।  

তিনি জানান, একদিন এক বন্ধুর দাওয়াতে তার বাড়িতে বেড়াতে যান রুবেল সিকদার। সেখান থেকে বন্ধুর উপহার হিসেবে ৫ জোড়া কবুতর উপহার হিসেবে পান। এই উপহার দিয়ে শখের বসে শুরু হয় কবুতর পালন। আর সেই ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করে তার খামারে এখন বিভিন্ন জাতের ১শ জোড়া কবুতর। সেখানে কাজ সব সময় দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ২ জন প্রশিক্ষিত যুবক। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে রুবেলের শ্রম ও মেধার কারণে।

শীতের সকালে রুবেল সিকদারের বাড়ির ৩ তলার ছাদে প্লাস্টিকের বেড়ায় বেস্টিত কবুতরের খামারের এক কোনে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার শখের কবুতর পালন নিয়ে।

রুবেল সিকদার জানান, দেড় বছর আগে বন্ধুর দেওয়া ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করেন কবুতরের খামার। সেখান থেকে এখন ১শ জোড়া। তবে এই দেড় বছরে সময়ের মধ্যে মাঝখানে বড় ধরণের একটি ধাক্কা তার জীবনে তিনি পার করছেন। যা কাটিয়ে উঠতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তার শখের খামারে বেশ কিছু কবুতর মারা যায়। সেখান থেকে তিনি তার পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তবে শখের বসে কবুতর পালন করতে গিয়ে তিনি মনে করছেন এটা বানিজ্যিকভাবে পালন করা জরুরী। আর সেই চিন্তা মাথায় রেখে তিনি সামনে এগিয়েছেন। তার খামারে কবুতরের পাশাপাশি দেশি জাতের মুরগি, ছাগল ও বিদেশি জাতের গাভীও রয়েছে।

তিনি জানান, শখের কবুতর খামার দেখে তার বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশি ও বন্ধু-বান্ধব তার কাছ থেকে কবুতর নিয়ে পালনে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও শখের খামারিরা তার খামার থেকে কবুতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার তিনিও বিভিন্ন জেলা থেকে তার পছন্দ মত কবুতর কিনে নিয়ে আসেন। রুবেলের খামারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ও সর্বোনিম্ন ১ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন জাতের কবুতর মিলছে।

খামারে সিরাজী, চিলা, রেস, বুম্বাই, মিশরীয় বুম্বাই, পাকিস্তানী কিং, মিশরীয় মেগপাই, ডায়মন্ড কিং, বিউটি কিং, দেশীসহ বেশ কিছু জাতের কবুতর পাওয়া রয়েছে। সব সময় কবুতরের খামার পরিচর্চার জন্য দুই জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যারা এই খামার দেখভাল করেন। এছাড়াও তার গরু, ছাগল ও মুরগীর খামারে আরো ৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর তারা সবাই প্রশিক্ষিত। এছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছেন।  এমনকি কোন সমস্যায় তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ছুটে আসেন। তাদের পরামর্শে কবুতরকে নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়। তবে কবুতরের খাবারের তালিকায় গম, ভূট্টা, রেজা ও সরিষা উল্লেখ্যযোগ্য।

রুবেল বলেন, ৫ জোড়া কবুতর উপহার পেয়ে প্রথমে ৩টি ছোট খাঁচা দিয়ে শুরু করি। এরপর যখন কবুতরের বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে, তখন প্রায় লাখ টাকা খরচ করে কবুতরের জন্য সেট তৈরি করি। সেখানে দেড় থেকে ২শ কবুতর পালন করা সম্ভব। এখন খামারে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে। প্রতি মাসে কবুতরের খাবার কিনতে ১০/১২ হাজার টাকা লাগে। এছাড়া দুইজন নিয়োগপ্রাপ্ত লোক তো আছেই। কবুতরের খাবার ও শ্রমিকের মজুরী বাদ দিয়ে প্রতি মাসে কবুতরের এই খামার থেকে প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকা আয় হয়।  

বেকার যুব সমাজকে উদ্দেশ্যে রুবেল বলেন, বেকার বা অলস থাকা একদমই ঠিক নয়। কারো ইচ্ছা শক্তি থাকলে ছোট থেকেই শুরু করা যায়। আপনারা ২ জোড়া দিয়ে শুরু করেন, দেখবেন এক বছরের মধ্যে আপনি আপনার পরিশ্রম দিয়ে এর ভাল সুফল পাবেন। আমি এক সময় বেকার ছিলাম। কিন্তু মাত্র ৫ জোড়া দিয়ে শুরু করে আজকে আমি লাভবান এবং এটা লাভজনকও বটে। বর্তমান সরকার বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করছেন এবং সহজ সুদে ঋণ দিচ্ছেন।

প্রতিবেশী শাহ আলম সিকদার (৩৯) বলেন, আমারই প্রতিবেশী ছোট ভাই রুবেল সিকদার কবুতরের খামার করেছে। সেখানে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ করছি। এখানে বেশ ভাল বেতনও পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ এই খামারের বেতন দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালই চলছে।

আর্কাইভ