• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কন্টেইনারে করে ফাহিম কীভাবে মালয়েশিয়ায়, জানে না পরিবার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম

কন্টেইনারে করে ফাহিম কীভাবে মালয়েশিয়ায়, জানে না পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে জাহাজের খালি কন্টেইনারে উদ্ধার হওয়া কিশোরকে তার পরিবার ছবি দেখে শনাক্ত করেছে।

পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, কিশোরের প্রকৃত নাম মো. রাতুল ইসলাম ফাহিম; বয়স ১৪। সে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া গ্রামের মো. ফারুক মিয়া ও রোকেয়া বেগম দম্পতির ছেলে। পেশায় দিনমজুর ফারুকের তিন ছেলের মধ্যে ফাহিম সবার বড়। সে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী।

দুই মাস আট দিন আগে ফাহিম বাড়ি থেকে ‘নিরুদ্দেশ’ হয় বলে জানালেও কীভাবে সে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে করে মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে পৌঁছেছে সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা কিছুই বলতে পারছেন না।

শনিবার বিকালে ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, “শুক্রবার রাতে পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া কয়েকটি ছবি থেকে কিশোর ফাহিমকে শনাক্ত করে। আমরাও বিষয়টি এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে।“

মনোহরগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাছ থেকে প্রথম জেনেছি। ঘটনাটির বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“

গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা হয়েছিল মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী ‘এমভি ইন্টিগ্রা’ নামের জাহাজটি, ১৭ জানুয়ারি সেটি মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে পৌঁছায়। মঙ্গলবার রাতে খালি একটি কন্টেইনার থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।

ওই কিশোরের কন্টেইনার থেকে বেরিয়ে আসার কয়েকটি ভিডিও মালয়েশিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। তাতে দেখা যায়, কিশোরটি বাংলায় কথা বলছে। সেখানে বাংলাভাষী এক ব্যক্তি তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে, সে জানায় তার নাম ‘ফাহিম’।

পরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশে ইসমাইল বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ছেলেটি কন্টেইনারে ঢোকার পর ঘুমিয়ে পড়েছিল। পরে সে এখানে এসে পৌঁছায়। সে মানবপাচার চক্রের শিকার নয়।

শনিবার দুপুরে ফাহিমের বাবা দিনমজুর ফারুক মিয়া বলেন, “আমরা ছবি দেখে রাতুলকে শনাক্ত করি। বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হয় সে। প্রায়ই সে এমন ঘটনা করে; আবার ফিরেও আসে। ভেবেছিলাম নিজে নিজেই ফিরে আসবে, তাই আর থানায় জিডি করতে যাইনি।“

বিষয়টি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার সামর্থও নেই জানিয়ে ফারুক মিয়া বলেন, “ছোটবেলা থেকেই সে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন। আমার ছেলেটাকে যেভাবেই হোক যেন দেশে ফিরিয়ে আনে, সেই আবেদন সরকারের কাছে।”

রাতুলের মা রোকেয়া বেগম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। জন্মগতভাবেই আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। সে কীভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে গেল এবং কন্টেইনারে করে মালয়েশিয়ায় গেল এ বিষয়ে কিছুই জানি না আমরা। আমি ছেলেরে ফিরে পেতে চাই। আমার ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা চাই।”

যে জাহাজের কন্টেইনার থেকে কিশোর ফাহিমকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই জাহাজের বাংলাদেশি এজেন্ট হচ্ছে  কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স (বিডি) লিমিটেড।

ফাহিমের খোঁজ পাওয়া সম্পর্কে কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক এস এম ফয়সল বলেছিলেন, জাহাজটি পোর্ট কেলাংয়ের আউটারে পৌঁছানোর পর সেখানে কন্টেইনারের ভেতর থেকে মানুষের আওয়াজ শুনতে পান ক্রুরা। তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন স্থানীয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে খবরটি জানালে সেখানকার প্রতিনিধি ও মেরিন পুলিশ জাহাজে যায় এবং কন্টেইনারটি শনাক্ত করার চেষ্টা করে। জাহাজটিকে জরুরি ভিত্তিতে জেটিতে ভিড়িয়ে কয়েকটি কন্টেইনার নামিয়ে সেটি শনাক্ত করা হয়। তারপর সেই কন্টেইনারে দেখা মিলে কিশোরের।

খালি কন্টেইনারটি চট্টগ্রামের নেমসন ডিপো থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে জাহাজ তোলা হয়। নেমসন ডিপো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরার উত্তর সোনাইছড়ি এলাকায়। এর মালিক রিলায়েন্স শিপিং।

পরিবার ধারণা করছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফাহিম হয়তো কোনোভাবে কুমিরার উত্তর সোনাইছড়িতে পৌঁছে যায়।

ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান হাওলাদার বলেন, “শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক আমাকে ছেলেটির কয়েকটি ছবি পাঠায়। পরে আমি সাতপুকুরিয়া গ্রামের একজনকে ছবিগুলো পাঠালে তিনি এবং পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা ফাহিম নামের ছেলেটাকে শনাক্ত করেন।”

“আমি ছেলেটার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ছেলেটির পরিবারটি অসহায়। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে ছেলেটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ফাহিম মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভাল।

আর্কাইভ