প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৩:১৪ এএম
মেয়েকে খুন করে উল্টো তার স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণ ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা করেও শেষ রক্ষা হলো না বাবা আবদুল কুদ্দুস খাঁ’র। সাত বছর ধরে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে স্বামীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিলেও তা বারবার নারাজি দিয়ে আসছিলেন বাবা কুদ্দুস খাঁ। সবশেষ পিবিআইয়ের হাতে তদন্ত এলে ঘটনা নতুন মোড় নেয়। পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষোভ ও সম্মানহানির চিন্তা থেকে মেয়েকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন আব্দুল কুদ্দুস খাঁ।
টাঙ্গাইলের কালিহাতির বাসিন্দা পারুল আক্তার। বাবার হাতে খুন হতে হবে তা হয়তো কখনও কল্পনাতেও আসেনি তার মনে। বাবা আবদুল কুদ্দুসের এমন নির্মম ও নৃশংসতার বীজ বপনের শুরুটা ২০১২ সালে। পরিবারের অমতে যখন বিয়ে করেন পারুল। পরবর্তীতে সংসারে অশান্তি শুরু হলে বাবাকে জানালে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে ফিরে আসতে বলেন। পরে তাকে বাসায় না এনে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে নিয়ে হত্যা করা হয়।
রোববার (২২ জানুয়ারি) পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
কুদ্দুস খাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সে স্বীকার করেছে— যে মেয়ের কারণে তার (কুদ্দুস) মানসম্মানের এত বড় ক্ষতি হয়েছে, সেই মেয়ের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। পরে তাকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে তারা বঙ্গবন্ধু ব্রিজ পর্যন্ত যান। তারা সেখানে হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটিকে ধাক্কা দিলে সে পড়ে যায়। এরপর মেয়েটির ওড়না দুই ভাগ করে একটি দিয়ে তার হাত বাঁধেন, অপর অংশ দিয়ে মুখ-গলায় টেনে শ্বাসরোধে হত্যা করে তুলসীগঙ্গা নদীতে ফেলে দেন।
এখানেই শেষ নয়। হত্যাকাণ্ডে জামাতাকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে তা প্রমাণে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। তার মায়াকান্না ব্যথিত করেছিল তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরও। তবে শেষ রক্ষা হয়নি কুদ্দুসের। বিভিন্ন সংস্থার হাত ঘুরে যখন ঘটনার কুলকিনারা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন পিবিআই ঘাতকের সাত বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রহস্যের জট খোলে। মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আবদুল কুদ্দুস।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, ভুল হয়েছে কাজটা। এ সময় তিনি অনেক কান্নাকাটি করেন।
এ ঘটনায় সহায়তাকারী হিসেবে মোকা মণ্ডল নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে বন্দি পারুলের স্বামী নাসির উদ্দিন।