প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৪:১৯ এএম
২১ বছর আগে চাচার হাত ধরে কাজের সন্ধানে ঢাকা যান খাদিজা খাতুন (২৮)। চাচা তাকে ঢাকার একটি বাসায় রেখে চলে আসেন। প্রথমে কয়েক মাস পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও বাবা মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সেই যোগাযোগ। মা-বাবা ও ভাই-বোনের জন্য মন কাঁদলেও ঠিকানা না জানায় আপন ঠিকানায় ফিরতে পারেননি খাদিজা।
সম্প্রতি আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের ৩২৭ নম্বর পর্বের ভিডিও ভাইরাল হলে খাদিজার পরিবারের নজরে আসে বিষয়টি। পরে যোগাযোগ করে গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) খাদিজাকে তার পরিবার ঢাকা থেকে গ্রামে নানার বাড়িতে নিয়ে আসে।
দীর্ঘ ২১ বছর পর হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের ফিরে পেয়ে খুশি খাদিজা। তবে বাড়িতে ফিরে এসে পাননি বাবাকে। অনেক বছর আগেই মারা গেছেন তিনি। এর আগে যখন তার বয়স পাঁচ বছর তখনই মারা যান তার মা।
সেই ছোট্ট খাদিজা এখন অনেক বড়। করছেন স্বামীর সংসার। তিনি এখন এক কন্যা সন্তানের মা। জীবন থেকে চলে যাওয়া ২১টি বছরের কষ্ট এখন তিনি ভুলে গেছেন বাক প্রতিবন্ধী বড় বোন খুদেজা ও ছোট ভাই মাইদুলকে পেয়ে। এর থেকেও বড় পাওয়া বলতে পারছেন তার একটি পরিচয় আছে।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নে বড়বাঘ গ্রামের মারফত মিয়ার মেয়ে খাদিজা। তার নানার বাড়ি পার্শ্ববর্তী কাটাবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাত মাস বয়সী কন্যাকে নিয়ে নানার বাড়িতে উঠেছেন খাদিজা। মা-বাবা বেঁচে না থাকায় কেউই থাকেন না তাদের বাড়িতে। এজন্যই নানার বাড়িতে উঠেছেন ।
খাদিজা খাতুন জানান, যখন তার বয়স পাঁচ বছর, তখন তার মা মারা যান। ৬ বছর বয়সে চাচা মঞ্জিল মিয়া খাদিজাকে ঢাকায় নিয়ে যান। মোহাম্মদপুর বস্তিতে কয়েক দিন থাকার পর খাদিজাকে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের একটি বিল্ডিংয়ে এক সাংবাদিকের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যান চাচা। চাচা কিছু দিন মাঝে মাঝে যোগাযোগ করলেও একপর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই সাংবাদিক পরে বাসা বদল করে আদাবরে চলে যান। খাদিজাও সঙ্গে যান। করোনার পর ২০২১ সালে খাদিজা গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। বাসার নিচের তলার গ্যারেজে সারাদিন কাটান। সন্ধ্যায় বাসার ওপর তলার আমিন সাহেব খাদিজাকে আশ্রয় দেন। তিনি খাদিজাকে তার লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে নিয়ে যান। কিছু দিন সেখানে থাকার পর নিয়ে আসেন ঢাকার বাসায়। এসে ওই সাংবাদিকের বাসায় যেতে চাইলেও তারা নেননি। পরে আমিন সাহেব খাদিজাকে মোহাম্মদপুরের একটি মাদরাসায় ভর্তি করে দেন।
একদিন মাদরাসার হুজুর সৈয়দ মাহবুবুর রহমান তার মুরিদ আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেন খাদিজাকে। খাদিজা রাজি হলে ২০২১ সালের ৩০ জুন আলাউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বর্তমানে সাত মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে তাদের। সম্প্রতি আর জে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে খাদিজার সাক্ষাৎকার দেখে স্বজনরা তাকে চিনতে পারেন। পরে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে কাটাবাড়িয়ায় নানার বাড়িতে তাকে নিয়ে আসা হয়।
খাদিজার মামাতো ভাই মতিউর রহমান বলেন, আমার ফুফাতো বোন খাদিজাকে ছয় বছর বয়সে তার চাচা ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর মোবাইলে ভিডিও দেখে তাকে আমরা চিনতে পারি। পরে ঢাকায় গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। খাদিজাকে ফিরে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। তবে ফুফা ও ফুফু বেঁচে থাকলে আরও ভালো লাগতো। খাদিজার মা মারা যাওয়ার পর তার ছোট ভাইকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। সেও কালকে দেখতে আসবে।
খাদিজার মামি লুৎফা বলেন, ২১ বছর আগে খাদিজা বাড়ি থেকে ঢাকায় গেলে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এখন পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।