• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ট্রাকচাপায় স্বামী, সন্তান ও মাকে হারিয়ে নির্বাক সুরাইয়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

ট্রাকচাপায় স্বামী, সন্তান ও মাকে হারিয়ে নির্বাক সুরাইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গাজীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিরাজ উদ্দিন-মহেলা দম্পতির সন্তান বাবুল মিয়া। প্রায় আট বছর আগে সুরাইয়ার সঙ্গে সংসার পাতেন বাবুল। বিয়ের তিন বছর পর তাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় নুসরাত। স্বামী, সন্তান ও পরিবার নিয়ে মহা আনন্দে চলছিল সুরাইয়ার সংসার। কিন্তু এক ট্রাকচাপায় সবাইকে হারালেন তিনি। স্বামী, সন্তান ও মাকে হারিয়ে নির্বাক সুরাইয়া।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে গাজীপুর আঞ্চলিক সড়কের বদনীভাঙ্গা গ্রামের চুক্কাবাড়ি নামক জায়গায় ট্রাক মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুরাইয়ার স্বামী, সন্তান ও মায়ের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলো বাছিরন (৫০), বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মেয়ে নুসরাত (৫)। হঠাৎ তাদের এমন মৃত্যুতে দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় ঘাতক ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে, চালক পালিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্রাকচাপায় নিহত বাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কয়েকশ মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। নিহতদের দাফনের জন্য কবর খোড়া হচ্ছে। উঠানে স্বামী, সন্তান ও মা হারানোর শোকে বিলাপ করছেন সুরাইয়া। পাশেই হেঁটে হেঁটে বুক চাপড়ে কাঁদছে বাবুলের ভাই হামিদুল ও বাবা। এমনই এক শোকার্ত পরিবেশে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি স্বজন ও প্রতিবেশীরাও। 

নিহতদের স্বজন, প্রতিবেশী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী থেকে জানা গেছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাবুল মা-বাবার সঙ্গে শিড়িশগুড়ি গ্রামেই থাকতো। তিনি নোমান গ্রুপের নাইস ডেনিম নামের একটি কারখানায় চাকরি করতেন। ঘটনার দিন বুধবার ছিল বাবুলের ছুটির দিন। ওই দিন সকালে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে অসুস্থ নানী শাশুড়িকে দেখতে বদনীভাঙ্গা গ্রামে যায় বাবুল। মেয়ে ও শাশুড়িকে মোটরসাইকেলে চেপে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ওই মোটরসাইকেল চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শাশুড়ি মারা যান। গুরুতর আহতবস্থায় মেয়ে নুসরাত ও বাবুলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু পথেই নুসরাত মারা যায়। অপরদিকে বাবুল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টায় মারা যায়।

নিহত বাছিরনের বোন মিছিরন আক্তার বলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সুরাইয়ার বাবা মারা যান। তার মৃত্যুর ৪১ দিন পর জন্ম নেয় সুরাইয়া। তার কোনো ভাই বোন নেই। এই দুর্ঘটনায় সুরাইয়ার আর কেউ বেঁচে রইলো না। মেয়েটা আজ থেকে একা হয়ে গেল।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, সব মৃত্যুই বেদনার। খুব অকালে একই পরিবারের তিন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। 

এ সময় নিহতের পরিবারের পাশে থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

নিহতের মামাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সুরাইয়ার মা নিহত বাছিরনকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় বাবা ও মেয়েকে বাড়ির পাশে দাফন করা হয়েছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। স্বজনরা কোনো মামলা করতে রাজি হয়নি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়না তদন্তে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আর্কাইভ