প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৩:১৬ পিএম
মৃত মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতার টাকা দিতে অস্বীকার করায় বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে আহত করেছেন তার তিন ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খিদরানি গ্রামে। আহত বৃদ্ধার নাম মির্জা আছিয়া রহমান (৬৫)। তিনি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা মতিয়ার রহমানের সহধর্মিণী।
এ ঘটনায় আছিয়া রহমান বাদী হয়ে তিন ছেলেকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন- বড় ছেলে ফারুক, মেজো ছেলে আসলাম ও ছোট ছেলে সবুজ।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আহত মির্জা আছিয়া রহমানকে। এর আগে ১৪ জানুয়ারি রাতে এই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আছিয়ার বড় মেয়ে নাজমা ও ছোট মেয়ে নাসিমা বলেন, চার বছর আগে তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মা মির্জা আছিয়া রহমান ভাতার টাকা তুলছেন। এ টাকা তিনি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছেন এবং নিজের খরচের জন্য কিছু টাকা রাখছেন। পরে নিজের জমানো টাকা দিয়ে জমি কেনেন মা। নিজের নামে দলিল করেন তিনি। এতে মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আমাদের তিন ভাই। জমি লিখে না দেওয়ায় এবং ভাতার পুরো টাকার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই ছেলেরা মাকে (আছিয়া রহমান) বিভিন্ন সময় গালিগালাজ ও নির্যাতন করে আসছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে গত ১৪ জানুয়ারি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বৈঠক করেন। কিন্তু ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মেনে সেখান থেকে মাকে তুলে নিয়ে যান ভাইয়েরা। মেজো ছেলে আসলামের বাড়িতে আটকে রেখে মাকে মারপিট করেন তারা।
ভুক্তভোগী আছিয়া রহমান বলেন, আমাকে আটকে রেখে ছেলেরা খুব পিটিয়েছে এবং পায়ে ও কোমরে আঘাত করেছে। এ কারণে উঠতে-বসতে পারছি না। সুযোগ পেয়ে রাতেই পালিয়ে আসি।
এছাড়াও বড় ছেলে ফারুক তার গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহীন মাহমুদ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি কিবরিয়া হাসান রিপন বলেন, একজন মাকে কোনো সন্তান ভাতার টাকার জন্য নির্মমভাবে পায়ে ও কোমরে আঘাত করতে পারে! এটা খুবই ঘৃণিত অপরাধ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলেও তাদের এমন অপরাধ মেনে নেওয়া যায় না।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গাজী ফজলুর রহমান বলেন, ওই সালিসি বৈঠকে আমিও ছিলাম। কিন্তু তার ছেলেরা কারও কথাই শোনেনি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।