• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইন্দুরকানীতে মাতৃত্বকালীন ভাতা‍‍`র আবেদন নিয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০২:১১ এএম

ইন্দুরকানীতে মাতৃত্বকালীন ভাতা‍‍`র আবেদন নিয়ে অনিয়ম

১০০ টাকা এএনসি  কার্ড, ২০০ টাকায় প্রত্যয়ন আর  দুইশ থেকে তিনশ টাকায় আবেদন।

পিরোজপুর প্রতিনিধি

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মাতৃত্বকালীন ভাতা‍‍`র আবেদনে অতিরিক্ত  ফি,  এএনসি কার্ড ও  চিকিৎসকের দেয়া প্রত্যয়নপত্রে  টাকা নেওয়ার  অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

১০০ টাকা এএনসি  কার্ড, ২০০ টাকায় প্রত্যয়ন  আর   দুইশ থেকে তিনশ টাকায় আবেদন।

ইন্দুরকানি উপজেলার  ৩ নং বালিপাড়া ইউনিয়ন  এবং  ৫ নং  চন্ডিপুর ইউনিয়নে  ২০২২ ২৩ অর্থবছরে মা ও শিশু  সহায়তা  (মাতৃত্বকালীন ভাতার) জন্য  অনলাইন আবেদনের জন্য  গর্ভবতী মায়েদের কাছ থেকে  নিয়ম বহির্ভূতভাবে  অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের   এ অভিযোগ উঠেছে।   অনলাইন আবেদনে অতিরিক্ত   টাকা আদায়  এবং  ডাক্তারের প্রত্যয়ন পত্রের  জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টি  স্বীকার করেছেন  বালিপাড়া গ্রামের  মুন্নি আক্তার, লিপি,  আসমা বেগম,  চন্ডিপুর গ্রামের নাসরিন, খোলপটুয়া  গ্রামের আয়েশা, মিনারা, কারিমা, চরবলেশ্বর গ্রামের নাসিমা সহ  আরো অনেক গর্ভবতী মা।  আর  এ বিষয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ায়  কয়েকজন ইউপি সদস্যও  অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে,   মাতৃত্বকালীন  অনলাইন আবেদন ফি  সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চল্লিশ টাকা  নির্ধারণ করা হলেও  চন্ডিপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে প্রতিটি আবেদনের জন্য ৩০০ টাকা গুনতে হয়েছে ।  তবে যারা বিশেষ পরিচিত তাদের কারো কারো কাছ থেকে  আবেদনের ফি বাবদ ২০০ টাকা করেও নেয়া হয়েছে। এছাড়া বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের   ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে প্রত্যেকের কাছ থেকে আবেদন ফি ২৪০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।

চন্ডিপুর ইউনিয়নের  ডিজিটাল সেন্টার থেকে  অনলাইনে  শতাধিক আবেদন  সম্পন্নের কথা স্বীকার করলেও  গর্ভকালীন ভাতার  জন্য এখানে আবেদন জমা পড়েছে আরো অনেক বেশি। 

অপরদিকে বালিপাড়া ইউনিয়নে ৫০ থেকে ষাটটি আবেদনের কথা স্বীকার করলেও শতাধিক  আবেদন জমা পড়ার কথা জানা গেছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের কাছ থেকে। বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের  ডিজিটাল সেন্টারের  দায়িত্বে থাকা মোঃ মিরাজুল ইসলাম এবং চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের  ডিজিটাল সেন্টারের  অনলাইন আবেদন গ্রহণের দায়িত্বে থাকা তারই ছোট ভাই ( মিরাজের)  জসিম উদ্দিন আবেদনকারীদের কাছ থেকে এ বর্ধিত ফি আদায় করেছেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। 

এদিকে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে হলে প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে এএনসি কার্ড ও সরকারি চিকিৎসকের প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করতে হয়।  

কিছু মায়েদের আগে থেকে সেবা গ্রহনের সময় এএনসি কার্ড সংগ্রহ করা থাকলেও প্রত্যয়নপত্র ছিল না কারোরই। গর্ভকালীন এএনসি কার্ড এবং প্রত্যয়ন পত্র নিতে  চন্ডিপুরের চৌমুহনীতে অবস্থিত বালিপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ছিল গত কয়েকদিন ধরে গর্ভবতী মায়েদের দীর্ঘ লাইন। 

বালিপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাক্তার দিলীপ কুমার ভক্ত  গত কয়েকদিনে  প্রত্যেকের কাছ থেকে শুধু প্রত্যয়ন বাবদ ২০০ টাকা করে  নিয়েছেন।  অথচ গর্ভবতী মায়েদের এনসি কার্ড ও প্রত্যয়নের জন্য কোন টাকা নেয়ারই বিধান নেই। 

অপরদিকে  এ দুটি ইউনিয়নে গর্ভবতী মায়েদের কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায় করে নিলেও  উপজেলার ১ নং পাড়েরহাট, ৪ নং ইন্দুরকানি সদর এবং পত্তাশী ইউনিয়নের চিত্র ভিন্ন। এসব ইউনিয়ন গুলোর স্ব-স্ব চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন ডিজিটল সেন্টার গুলোতে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ধার্যকৃত চল্লিশ টাকা এবং উদ্যোক্তার জন্য ১০ টাকা সহ  মোট ৫০ টাকা হারে  অনলাইন আবেদন  ফি নেয়ার কথা জানান জনপ্রতিনিধিরা। তবে এসব ইউনিয়ন গুলোতে কারো কারো কাছ থেকে  সর্বোচ্চ ১০০ টাকা করেও আবেদন ফি নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

সূত্র আরো জানা যায়, ২০২২ ২৩ অর্থবছরে মা ও শিশু  সহায়তা  (মাতৃত্বকালীন ভাতার) জন্য  অনলাইন আবেদনের   সার্ভারের সমস্যার কারণে সময় মত সব ইউনিয়নে অনলাইনে আবেদন নিতে না পারায়  নির্ধারিত ১৫  জানুয়ারির  পরিবর্তে  আগামীকাল বিশ জানুয়ারি পর্যন্ত  সময় বাড়ানো হয়েছে।  আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাছাই প্রক্রিয়ার  মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়নে ৩০ জন গর্ভবতী মা পাবেন গর্ভকালীন ভাতা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতিমাসে আরো পাঁচজন করে  ভাতার আওতায় আসবেন।

বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের দায়িত্বে থাকা মোঃ মিরাজুল ইসলাম এবং চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের  ডিজিটাল সেন্টারের  অনলাইন আবেদন গ্রহণের দায়িত্বে থাকা মিরাজুল ইসলাম  এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেউ ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা দেন। কেউ আবার টাকা দেন না। তবে জসিম উদ্দিন কয়েক জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।  

বালিপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার  উক্ত অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে ডাক্তার দিলীপ কুমার ভক্ত জানান,  প্রত্যয়ন পত্রে কোন টাকা লাগে না। আর গর্ভবতীদের প্রত্যয়নের জন্য আমরা কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।

এএনসি কার্ড ও প্রত্যয়ন পত্রের  জন্য টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন জানান,  এক্ষেত্রে টাকা নেয়ার  কোন বিধান নেই। তবে এরকম হয়ে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন ফি  সর্বোচ্চ ৫০ টাকার বেশি নেওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে বেশি নিয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ