প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের মনপাল গ্রামের মৃত আকর উদ্দিনের ছেলে মোখলেসুর রহমান। বর্তমানে তার বয়স ১২৭ বছর। এই বয়সেও নামাজ আদায় করতে হেঁটে বাড়ির পাশে মসজিদে যান তিনি। তবে অভাব অনটনে শেষ বয়সে এসেও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
টিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে একাই বসবাস করে বয়োবৃদ্ধ এই মানুষটি। ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে কনকনে শীতের বাতাস প্রবেশ করে। গরম কোনোভাবে কেটে গেলেও শীতে বেশি কষ্ট হয় তার।
বৃদ্ধ মোখলেসুর রহমান বলেন, তার চেয়ে বেশি বা সমান বয়সের মানুষ আশপাশের ২০-২২ গ্রামেও নেই। তার বাবা আকর উদ্দিন ৭৫ বছর ও মা জোবেদা খাতুন ১৫০ বছর বয়সে মারা যান। তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিন ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে দুই ছেলেও মারা গেছেন। এক ছেলে আর এক মেয়ে জীবিত আছে, তাদেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।
তিনি জানান, ১৮৯৫ সালের দিকে জন্ম নেন তিনি। তার সমবয়সী, খেলার সাথী, বন্ধুরা মারা গেছেন ৩০-৪০ বছর আগে।
অক্ষরজ্ঞানহীন মোখলেসুর জীবিকা নির্বাহ করতেন রিকশা চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নানা ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী মোখলেসুর রহমানের স্মৃতিশক্তি এখনো বেশ সচল।
১২৭ বছরের এই বৃদ্ধা বলেন, যখন শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করেছি, খেয়েছি। ছেলে-মেয়েকে খাইয়েছি। উপার্জিত অর্থ জমিয়ে সম্পদ কিনিনি। এখন খেতে পারি না। এক সময় আধা কেজি থেকে পৌনে এক কেজি চালের ভাত খেয়েছি। এখন অভাবে ঠিকমত খেতে পাই না। ১ ছেলে আর ১ মেয়ে জীবিত আছে তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বয়স্কভাতার একটা কার্ড আছে, তা দিয়ে ৩ মাস পর ১৫০০ টাকা পাই, তাতে কোনোরকম চললেও ঠিকমত ওষুধ খেতে পারি না। ভালো একজন ডাক্তার দেখাতে পারি না। সরকারি আরও সুযোগ সুবিধা পেলে ভালো হয়।
অতীত স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, দেশে এক সময় খুব অভাব ছিল। গ্রামের রাস্তাঘাট ছিল না। টিভি-রেডিও ছিল না। বর্ষায় গ্রাম থেকে নৌকা ছাড়া বের হওয়া যেত না। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে সন্ধ্যায় পুঁথি পাঠ ও জারি গানের আসর বসত। সারা দিন কাজ করে এক আনা পেতেন। তখন চাল সোয়া সের ছিল ৩ আনা। গ্রামে আর্থিক অবস্থা ভালো শুধু হাজিবাড়ির ও মোল্লাবাড়ির লোকজনের। লেখাপড়া ছিল হাজি আবদুল জব্বার ও মোল্লা মনিরুদ্দিন মুন্সীর। দেশে মানুষের দিনবদল হয়েছে ইরি বোরো ধান আসার পর। ক্ষুধার কষ্ট কমেছে।
মনপাল গ্রামের বাসিন্দা নজির আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই দেখতাম মোখলেস চাচা খুব শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। তিনি প্রচুর খেতে পারতেন। তার সমান বয়সের মানুষ ১০ গ্রামেও নেই। তাকে আরও সরকারি সুযোগ সুবিধা দেওয়া উচিৎ।
উত্তরদা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, মনপাল গ্রামের মোখলেসুর রহমান সাহেবের মতো বয়স্ক মানুষ আশপাশের এলাকায় নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করা আছে। সহযোগিতা করার জন্য মেম্বারদের হাতে তেমন সুযোগ কম। তবে ২০-২৫ দিন আগে আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব খবর দেওয়ায় আমি ওনাকে নিয়ে পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান সাহেব ওনাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া আমি সব সময় ওনার খোঁজখবর রাখছি।
উত্তরদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে ফেসবুকে উনার সম্পর্কে একটি লেখা দেখে আমি ওনাকে পরিষদে খবর দিয়ে এনেছি। ওনাকে কম্বল দিয়ে বলেছি প্রতিমাসে আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি ওনাকে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট অর্থ দিব। একটি ইউনিয়ন পরিষদে একজন মানুষকে সহযোগিতা করার অনেক কিছু আছে। আমারও সদিচ্ছা আছে তাকে সহযোগিতা করার। তিনি যদি সবসময় যোগাযোগ রাখেন তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। আমি ওনার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক।