প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩, ০১:৫২ এএম
সুরাইয়া আকতার রিনি (১৭)। বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। দুই বোনের মধ্যে সে বড়। ২০১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর ২০২২ সালের মার্চে মাকে হারায়। বাবা-মাকে হারিয়ে যেন অকূল দরিয়ায় পড়ে রিনি ও তার ছোট বোন। কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত রোগ নিয়েই জন্ম রিনির। জন্মের পর থেকেই অসুস্থ সে। ১৭ বছর ধরে সেই অসুস্থতা নিয়ে কাটছে তার সময়।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের ফতিয়ারদাইড় গ্রামের দিনমজুর বাবার ভিটা ছাড়া কোনো জায়গা-জমি নেই। বাবা বেঁচে থাকতে তার আয়ে কোনোমতে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসারে তাই রিনির চিকিৎসার একমাত্র ভরসা আত্মীয়-স্বজনরাই। তাদের অর্থের ওপর ভর করে এখনো চলছে রিনির চিকিৎসাসেবা।
রিনির আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাত্র আড়াই বছর বয়সে ভুল চিকিৎসায় রিনির একটি কিডনি কেটে ফেলেন চিকিৎসক। এরপর থেকে একটি কিডনি নিয়েই চলছে রিনির জীবনযুদ্ধ। অভাব-অসুস্থতার মধ্যেই বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান। এরপর আত্মীয়দের সহায়তায় সংসার চলছিল তাদের। সঙ্গে রিনির চিকিৎসাও।
প্রতিদিন অসুস্থতা নিয়েই চলছিল রিনির পড়াশোনা। ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বসার আগেই মাকে হারায় সে। ওই বছরের মার্চে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মা মারা যান। ছোট বোনকে নিয়ে রিনির কান্না যেন আর থামে না। কে তাদের দেখবে, কে-ই বা তাদের চিকিৎসার খরচ মেটাবে। এই দোলাচলে রিনি পরীক্ষায় বসে। তবে গণিতে ফেল করায় ফল আসেনি। ভীষণ মনোকষ্ট নিয়ে এখন সময় কাটছে তাদের। আত্মীয়রাই তাদের দুটি ঘর করে দিয়েছে। সেই আত্মীয়দের ওপর ভর করেই এখন এই এতিম দুই বোনের জীবন চলছে।
রিনিকে রাজশাহীতে তিনজন ইউরোলজির চিকিৎসকের কাছে দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর সর্বশেষ দেখানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কিডনি বিভাগের চিকিৎসক মোহা. সিদ্দিকুর রহমানকে। তিনি জানিয়েছেন, রিনির বাকি একটা কিডনির অবস্থাও ভালো নয়। সেই কিডনির উন্নত চিকিৎসা না করলে তাকে হয়তো বাঁচানো যাবে না। দ্রুতই তার চিকিৎসা প্রয়োজন।
রিনির মামা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রিনির চিকিৎসায় অন্তত ১০ লাখ টাকা দরকার। এই টাকা কোনোভাবেই সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এতিম এই কিশোরীর জীবন বাঁচাতে হৃদয়বান মানুষদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তারা।
তিনি জানান, হৃদয়বান মানুষদের থেকে অর্থ সহায়তা পেলে রিনিকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। হয়তো এতে বেঁচে যাবে তার জীবন। পৃথিবীতে অন্য দশজনের মতো সেও স্বাভাবিক জীবন কাটাবে।
বাউশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়েটা অনেক অসহায়। বাবা-মা মারা গেছে। মেয়েটার একটা কিডনি নষ্ট হয়েছে গেছে শুনেছিলাম। কিছু দিন হলো আরও একটি কিডনি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। অনেক কষ্ট করে তার চিকিৎসা চালাচ্ছেন স্বজনরা। অনেক সময় আমরাও এলাকায় টাকা তুলে তার চিকিৎসা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা কিডনি নষ্ট। এখন ভালো আরেকটা কিডনি নষ্ট হলে মেয়েটা মারা যেতে পারে। তাই আগে থেকে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে রিনির চিকিৎসায় সহযোগিতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
যোগাযোগ ও সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা
বিকাশ- ০১৭০৮৮৮৬৭৭০ (রফিকুল ইসলাম), সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ৪৬০৫০০২০৬৮৩৮২ ফারহানা ইসলাম (মামাতো বোন), সোনালী ব্যাংক লি. আড়ানী শাখা, রাজশাহী।