• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিষখালী নদীর মাটি ইটভাটায়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম

বিষখালী নদীর মাটি ইটভাটায়

বরগুনা প্রতিনিধি

বিষখালী নদীর চর থেকে রাতারাতি মাটি উধাও হয়ে যাচ্ছে। কোনো বাধা, কোনো আইন না মেনেই ইট তৈরির জন্য এই মাটি নিয়ে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বিষখালী নদীর পাড়ে এই মহোৎসব চলছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভাটার মালিকরা বলছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে মাটি কিনে ইট তৈরি করছি, মাটি চুরির প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায় ৯টি ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেকটিরই একই অবস্থায় ইট তৈরি হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত এক মাস ধরে বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকার চর থেকে এক্সকাভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়া হয়। নদীর চর থেকে মাটি কেটে ভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি তে স্থানীয় একটি চক্র জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার এই ইটভাটার মালপত্র পরিবহনের জন্য বিষখালী নদী পাড় ভরাট করে ঘাট তৈরি করেছন এক ইট ভাটার মালিক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরগুনার বামনা  উপজেলায় খোলপটুয়া গ্রামের পাশ৷ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিষখালী নদীর পাড়ে জেগে ওঠা চর থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটছে নাজাত নামের একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠান। রামনা গ্রামের এমএমবি-২ ইটভাটার পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ভাটাসংলগ্ন এলাকায় বিষখালী নদীতে পিলার দিয়ে ও গাছের পাইলিং করে ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। বামনা এলাকার পূর্ব সফিপুর এলাকায় নদীর চর এমকেএস ব্রিকসের পরিধি বাড়াতে চর দখল করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নাজাত ব্রিকস খোলপটুয়া এলাকায় (পাউবো) র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন।

খোলপটুয়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন বলেন, এই রকম বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চরম হুমকিতে পড়বে। আমরা গ্রামবাসী মাটি কাটায় বাধা দিলে অথবা প্রতিবাদ করলে আমাদের হুমকি দেয়া ইটভাটা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন যে পরিস্থিতি বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এই বাঁধ ভেঙে গিয়ে এলাকায় পানি ঢুকে আমাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই আমরা।

নাজাত ব্রিকসের ট্রাক চালক আল আমিন বলেন,আমি প্রতিদিন  ৪০ থেকে ৪৫ ট্রাক  মাটি ইটভাটায় নিয়ে থাকি। প্রতিদিন দুই হাজার টাকা মজুরিতে নদীর চর থেকে কাটা মাটি ভাটায় পরিবহন করি। আমার মত আরও একটি গাড়ী চলে এই ভাটায়। দুটি গাড়িতে প্রতিদিন প্রায় সাত  থেকে আট হাজার মাটি পরিবহন করে থাকি।

নাজাত ব্রিকসের মালিকের ছেলে আল আমিন নাজাত বলেন, আমাদের এখানে সরকারি কোনো জমি নেই। এই জমি রেকর্ডীয়। স্থানীয়রা লোকেরা আমাদের কাছে এই মাটি বিক্রি  করছে।

নদী ভরাট করে ঘাট নির্মাণের বিষয়ে বলেন, এমএমবি পণ্য ওঠানো- নামানো জন্য বালু ও মাটি দিয়ে নদী ভরাট করেছেন এবং নদীর চরের মাটি কেটে নিয়েছে এম এমবি ইট ভাটা।

ইটভাটা মালিক মোস্তফা ফকির বলেন, মূলত নদীর চরের মাটি ছাড়া ভালো ইট তৈরি হয় না। বামনা উপজেলার সব ভাটাগুলোতে নদীর চরের মাটি নেয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে আমরা  চর কিনে এই মাটি সংগ্রহ করি। দুইবছর পর আবার মাটি কাটা চর ভরে যায়। তারপর আবারও কিনে থাকি। নদীর ক্ষতি হয় এমন কিছু আমরা করি না।

পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিপন সাহা জানিয়েছেন, নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসংলগ্ন এলাকার নদীর তীরের মাটি কাটা অবৈধ। সরেজমিনে পরিদর্শন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, তারা যদি নদীর তীরের মাটিকাটে তাহলে আমরা সরজমিনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

 

 

এনএমএম/ এএল

আর্কাইভ