প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৩:৫২ এএম
পাবানা জেলার নয়টি উপজেলায় মোট ১৯৩টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। যার নেই কোনো অনুমোদন বা ছাড়পত্র। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব, আবার নিয়ম না মেনে ইটভাটা গড়ে ওঠায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কমে যাচ্ছে বন ও কৃষি জমি। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যে সুত্রে জানা যায়, পাবনা জেলায় মোট ১৯৩টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৪০টির। বাকি ১৫৩টি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে বছরের পর বছর। আর ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা রয়েছে।
পাবনার বেড়া উপজেলায় ১৬টি ভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র চারটি। পাবনা সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৫টি, ঈশ্বরদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ পাঁচটি। আটঘরিয়া উপজেলায় একটি বৈধ ও একটি অবৈধ। চাটমোহরে ছয়টি ভাটার মধ্যে চারটি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার নয়টি বৈধ। ভাঙ্গুড়ায় সাতটির মধ্যে বৈধ মাত্র দু’টি। ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ১১টি করে মোট ২২টি ইটভাটা থাকলেও একটিরও অনুমোদন নেই।
পাবনার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে এবং কয়লার পরিবর্তে খড়ি পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে একদিকে কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বনায়ন ধ্বংস হচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবৈধ ইটভাটার মালিক জানান, বৈধভাবে ইট প্রস্তুত করতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন নিতে গিয়ে হায়রানির শিকার হতে হয়। তাই অনৈতিক পথে ব্যবসা করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আমরা ব্যবসা করছি, সে তালিকা প্রশাসনের কাছে আছে। কিন্তু আমাদের অনুমোদন দিতে নানা হয়রানি করা হয়। টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিন্নপথে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিম্নমানের চিমনী ব্যবহার, কাঠ পোড়ানো, অনুমোদন ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা করায় জেল জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে অর্থ দিয়ে তাদের ম্যানেজ করা হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় উৎসাহিত করেন। ফলে আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
চাটমোহর উপজেলার সিটিবি ইটভাটার মালিক আব্দুল খালেক মুঠোফোনে বলেন, অনুমতি নিয়ে কাজ করছি। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে কিনা, লাইসেন্স পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোন রেখে দেন।
বৈধ ইটভাটার মালিক রুহুল আমিন বিশ্বাস জানান, অবৈধ ইট ভাটার দৌরাত্মে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এ মৌসুমে ভাটা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমরা কয়লা দিয়ে পরিবেশবান্ধব চিমনি ব্যবহার করে ইটভাটা চালাই। আমাদের যা উৎপাদন খরচ হয় তার চেয়ে কম দামে অবৈধ ভাটাগুলো ইট বিক্রি করে। ফলে আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে।
জেলায় বিভিন্ন ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ’আমরা ইতোমধ্যে এমন অভিযোগ পেয়েছি। ডিসি অফিসে মিটিং করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
ইটভাটার মালিকরা অবৈধভাবে তাদের ম্যানেজ করেছেন এমন বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ’তারা মিথ্যা ছড়াচ্ছে। কথাগুলো সঠিক নয়।’
পরিবেশ অধিদফতর পাবনার সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘জনবল সঙ্কটের জন্য কোনো অভিযান চালাতে গেলে জেলা প্রশাসনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। আমার দফতর থেকে অভিযান পরিচালনা করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।’
জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া ও বেড়ার কিছু ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অর্থদণ্ডসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ অভিযান অব্যহত রয়েছে।’
অবৈধ ইটভাটার মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা লাইসেন্স নিয়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা করুন।’
এআরআই