• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পিতার লাশ ৪০ ঘণ্টা রাস্তায়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ০২:১৯ পিএম

টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পিতার লাশ ৪০ ঘণ্টা রাস্তায়

চট্টগ্রাম ব্যুরো

পিতার অবসর ভাতার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ৪০ ঘণ্টা ধরে পিতার লাশ দাফন আটকে রাখার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়ি এলাকায়।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত থেকে বাবা মনির আহমেদের (৬৫) মরদেহ সড়কে ফেলে বিরোধে জড়ায় সন্তানরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স এনে করা হয় মরদেহ রাখার ব্যবস্থা।

পিতার মৃত্যুতে ছেলেদের শোক প্রকাশ দূরে থাক, টাকার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিতার মরদেহ দাফন পর্যন্ত করেনি। মরদেহটি অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে ছিল। এদিকে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করছিল সন্তানরা। পিতার মরদেহ আটকে সন্তানদের টাকা ভাগাভাগির বিরোধে পুরোপুরি হতভম্ব আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি এমনকি এলাকার বাসিন্দারাও। ৪০ ঘণ্টা পর সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলমের হস্তক্ষেপে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম বলেন, ৪০ ঘণ্টা পর মনির আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় এলাকার মানুষ মিলে এই দাফন কাজ সম্পন্ন করেন। সন্তানরা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। পদ্মা অয়েলে কাজ করতেন মনির আহমেদ। অবসরের পর তিনি আশি লাখ টাকা পান। অবসরের পর জানতে পারেন তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। এ সময় চাকরি জীবন ও অবসরের সময় পাওয়া অর্থ ক্যান্সার চিকিৎসার কাজে ব্যয় করতে চাননি মনির আহমেদের পুত্র সন্তানরা। সন্তানদের মতো একটি টাকাও খরচ করতে চাননি মনির আহমেদের স্ত্রীও। তবে মনির আহমেদের তিন মেয়ে চিকিৎসার জন্য তার বাবার অর্থ খরচ করেন। অনেক সময় ব্যক্তিগতভাবেও বাবার জন্য টাকা খরচ করে চিকিৎসা করান। এই কারণে মনির আহমেদ তার নিজের অর্থ থেকে মেয়েদের চেকের মাধ্যমে কিছু অর্থ দেন। বাবার মৃত্যুর পর মেয়েরা বাড়িতে আসলে তাদের আটকে রাখেন ভাইয়েরা। এ সময় তাদেরকে মারধরও করা হয়। বাবার দাফন না করে বোনদের কাছে চিকিৎসার জন্য খরচের অর্থ দাবি করেন তারা। না দিলে বাবার দাফন না করারও হুমকি দেয়া হয়। পরে খবর পেয়ে মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। মনির আহমেদের স্ত্রী ও পুত্র সন্তানদের পক্ষে ছিলেন বলে জানান তিনি। বাকি টাকা সমানভাগে ভাগ করে দেয়ার আশ্বাসে এ দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ১৭ হাজার টাকাও সন্তানরা নয়, আমি পরিশোধ করেছি।

দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন মৃত মনির আহমেদ। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন তিনি। মনির আহমদের অবসরের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে মেজো মেয়ে বেবি আকতারের সঙ্গে অন্য ভাইবোনদের বিরোধ চলছিল।

শনিবার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মান্যগণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক বৈঠকও হয়। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে এনে মরদেহ রেখে দেন বাড়ির পাশের সড়কে। সকাল থেকে অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে।

 

এনএমএম/এএল

আর্কাইভ