প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৮:৪৬ পিএম
করোনা মহামারির প্রভাব অনাবৃষ্টি খরাসহ নানান প্রতিকূলতায় গত দুই বছর যাবৎ পান বিক্রি করে ভালো দাম না পাওয়া ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাতক্ষীরার পান চাষিরা। তবে চলতি বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতের মৌসুমে পানের উৎপাদন কম হলেও চড়া দামে পান বিক্রি করতে পেরে খুশি পান চাষিরা। এতে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠে মোটা অংকের লাভের সম্ভাবনাও দেখছে এ অঞ্চলের পান চাষিরা।
সরজমিনে সাতক্ষীরা কলারোয়ার সরসকাটি পানের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে পানের বাজার বসে বেচা বিক্রি শেষ হয় মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবারের এ পান হাটে বড় পান বিক্রি হচ্ছে প্রতি পোন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, মাঝারি পান ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোট পান ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও পাকা বা বাদামি রংয়ের পান প্রতি পোন ৫০ টাকা মাঝারি ও ছোট ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত দুই বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি দাম এমন দামে পান বিক্রি করতে পেরে চাষিদের মুখে যেন খুঁশির হাঁসি দেখা গেছে।
কলারোয়া উপজোলার জয়নগর ইউনিয়নের পান চাষি অনুপম ঘোষ জানান, কলারোয়া অঞ্চলে পন ও গাদি হিসাবে পান খুচরা বা পাইকারি বিক্রি হয়। ৮০ পিছ পানে এক পন এমন ৫০ বা ৬০ পন একত্রিত করে বাঁধলে তা গাদি হিসেবে পরিচিত৷ এ অঞ্চলের পান চাষিরা সাধারনত পান বাঁধতে কলাগাছের আশ ও কলা পাতা ব্যবহার করেন।
কলারোয়া পৌর সদরের মুরারিকাটি এলাকার পান চাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের এই শীতের মৌসুমে পানের দাম একটু বেশি থাকে। কারণ হিসেবে তিনি আরও বলেন, শীতের সময় পান গাছের কচি পাতার বৃদ্ধি ঘটেনা, পান পাতা পেঁকে বাদামি রংয়ের হয়ে যায়, নির্দিষ্ট সময়ে পান কাটতে না পারলে ঝরে যায়, এ সময় গাছ থেকে সীমিত পরিমান পান কেটে বিক্রি করা যায় সব মিলিয়ে শীতের মৌসুমে পানের উৎপাদন কম হয়। এসব কারণে পানের দাম বেড়ে যায়। তবে চলতি মৌসুমে পানের স্বাভাবিক দামের থেকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রতি হাটে তিনি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেন।
জয়নগরের পান চাষি তপন দাস বলেন, এক বিঘা জমিতে পানের বরজ তৈরিসহ ঘেরা বেড়া রোপণে খরচ হয় প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা৷ বাংলা আষাঢ় মাসে রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের দুই মাস পরে মৌসুমের আবহাওয়া ভালো থাকলে কিছু পান ভেঙে বিক্রি করা যায় তবে ছয় মাস পর থেকেই পরিপূর্ণভাবে বছরের ১২ মাস প্রতি সপ্তাহে গাছ থেকে পান ভেঙে বিক্রি করা যায়।
তরুণ পান চাষি দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী বলেন, আবহাওয়া ও দাম অনুকূলে থাকলে বছরে খরচ বাদে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা লাভ থাকে। পান বরজ তৈরির এক বছর পর থেকে প্রতি বছর বরজে সব থেকে বড় খরচ হয় আষাঢ় ও ভাদ্র মাসে৷ পান পাতা ভাঙ্গার কারণে গাছ লতিয়ে লম্বা হয়ে যায় এ সময় লম্বা হয়ে যাওয়া গাছগুলো না কেটে মাটিতে পুঁতে বাঁশের শলার সঙ্গে লতা বাঁধতে বিঘা প্রতি ৬০থেকে ৭০ হাজার খরচ হয়। তবে গত দুই বছরে যে লোকসান হয়েছে চলতি মৌসুমে চড়া দামে পান বিক্রি করতে পারলে সব ক্ষতি কাটিয়ে বেশ মোটা অংকের লাভের আশা করছেন তিনি।
পান ব্যাপারি কার্তিক চন্দ্র বলেন, গতবছর সবথেকে বড় পান ৮০ টাকা ও মাঝারি ২০ টাকা ও ছোট পান পাঁচ টাকা পোন দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর চলতি এই শীতের মৌসুমে পানের দাম বাজার অনেক চড়া। বড় পান বিক্রি হচ্ছে প্রতি পোন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, মাঝারি পান ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোট পান ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়াও পাকা বা বাদামি রংয়ের পান প্রতি পোন ৫০ টাকা মাঝারি ও ছোট ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জয়নগর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার মজুমদার বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় শীতের এই মৌসুমে চাষিরা ভালো দামে পান বিক্রি করতে পারছে জয়নগর, দক্ষিণ-উত্তর ক্ষেত্রপাড়া ও ধানদিয়া ৪টি গ্রামে প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে কৃষকেরা পান চাষ করেন৷ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে তাদেরকে উত্তম পান চাষের সার্বিক পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়।
সজিব/এএল