• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মোর পোলা-বউ-নাতীর হাড্ডিগুলান চাই

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০৮:১৩ পিএম

মোর পোলা-বউ-নাতীর হাড্ডিগুলান চাই

বরগুনা প্রতিনিধি

গত বছর ২৪ ডিসেম্বর অভিযান ১০ ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারায় ইরাতন বিবির ছেলে হাকিম শরীফ, তার পুত্রবধূ পাখি বেগম ও নাতি নাসরুল্লাহ। তবে ডিএনএ টেস্টে শনাক্ত হলেও এখন পর্যন্ত পরিবার বুঝে পায়নি মরদেহগুলো। এমনকি এক বছরে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তাও পায়নি অভিযান ১০ লঞ্চ ট্র্যাজেডির পরিবার। নিহতদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবনগোলা গ্রামে।

প্রিয়জনদের হারিয়ে শোকে স্তব্ধ এখন ৭০ বছর বয়সী ইরাতন। তিনি বলেন, মোর পোলা ঢাকায় কাম করত, বউ ও এক নাতি তাগো লগেই থাকত। মোর বড় নাতনি হাফসা ও ওর ২ ভাইবোন আমার সঙ্গে বাড়িতে থাকত। মোর বড় নাতি হাফসার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় মোর পোলা ঢাকা থেকে বিয়ের বাজার করে বাড়ি আইতাছিল। সঙ্গে ছিল বউ ও নাতি নাসরুল্লাহ। তয় তাগো আর বাড়ি ফেরা হইলো না। লঞ্চে পুইড়া ছাই হইয়া গেছে তিনজনই। বাড়িতে তিন নাতি নাতনি আছে, তাগো ভরনপোষণ দেয়ার ক্ষমতা নাই মোর।

তিনি আরও বলেন, মোর তো চাওয়ার আর কিছু নাই৷ হারাজীবন কানলেও অগো তো আর ফিররা পামু না। অগো মাংসও এহন মাটিতে মিশে গ্যাছে, তয় হাড্ডিগুলা আছে, এক বছরে হাড়ের কিছু হয় না। মোর পোলা, বউ আর নাতিডার হাড্ডিগুলা চাই।

নিহত হাকিম শরীফের ছোট ভাই বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি। কিন্তু আমরা এখনও লাশগুলো পাইনি৷ এমনকি এ পর্যন্ত আমরা কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তাও পাই নাই। আমি আর আরেক ভাই দিনমজুরি করে যা পাই তা দিয়ে নিজেদের চলতেই সমস্যা হয়ে যায়৷ তার মধ্যে আমার তিন ভাতিজা ভাতিজি আছে৷ সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমরা যেন লাশগুলো পাই, এবং সরকারি সাহায্য পাই। সহায়তা পেলে ওরা খেয়ে পড়ে থাকতে পারবে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান  বলেন,  ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে আমরা ১৪ মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছি। বাকি মরদেহগুলোর পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। যাদের শনাক্ত করা গেছে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য আমরা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে আর্থিক ক্ষতিপূরণের চেকগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে চেকগুলো দিয়ে দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে ৪১ জনেরই বাড়ি বরগুনায়। এদের মধ্যে ১৮ জনকে বিভিন্ন নমুনা দেখে শনাক্ত করে নিয়ে গেছে স্বজনরা৷ বাকি ২৩ জনকে বরগুনার পোটকাখালী গণকবরে ২১ জন সমাহিত করা হয়েছে। এই ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনকে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করতে পেরেছে পরিবার৷ তবে এখনও কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি৷

এদিকে শনাক্ত করে নিয়ে যাওয়া ১৮ মরদেহর পরিবারকে নৌ পরিবহন তহবিল ট্রাস্টি বোর্ড হতে দেড় লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। শনাক্তের জন্য ৪৮ জনের ডিএন-এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে ১৬ জনকে শনাক্ত করেছে স্বজনরা। নিখোঁজ রয়েছে এখনও ১৬ জন।

 

এনএমএম/এএল

আর্কাইভ