প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম
পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধের জন্য ছেলে ও ছেলের বউয়ের হাতে অমানবিক মারধরের শিকার হয়েছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা জাহানারা বেগম। বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া এবং সম্পত্তির জন্য মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মা ও ছোট ছেলের পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কোটি টাকার সম্পদের মালিক ও বিলাসবহুল বাড়ি থাকলেও জাহানারা বেগমের জায়গা হয়নি ওই বাড়িতে।
বর্তমানে বৃদ্ধা মা থাকছেন পাশের বাড়ির সম্পর্কে দেবর-ভাসুরের বাড়িতে। নির্যাতিত জাহানারা বেগম কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাকই দক্ষিণ ইউনিয়নের কোঁয়ার গ্রামের মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ ও আদালতের দারস্থ হয়েছেন।
জাহানারা বেগম বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সামনে ছেলে এবং ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেন, আমার দুই ছেলে শহিদুর রহমান, আরিফুর রহমান ও দুই মেয়ে নাজমা বেগম, মর্জিনা বেগম। আমাদের প্রায় ৮০০ শতক মাঠে ও বসতবাড়িতে সম্পত্তি রয়েছে। স্বামী ছিদ্দিকুর রহমান ২০১৯ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে বড় ছেলে শহিদুর রহমান (৪৫) ও তার স্ত্রী সেলিনা (৩০) তাদের নামে সম্পত্তি দেয়ার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আমার খোঁজ-খবর নিত না, ভরণপোষণ করত না, চিকিৎসা খরচও দেয় না।
বড় ছেলে শহিদুর রহমান সব সময় খরাপ আচার ও মাদকসেবনের সঙ্গে জড়িত। নেশার টাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত আমাকে। দীর্ঘদিন ধরে এই ছেলে ও ছেলের বউয়ের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।
মায়ের অভিযোগ, গত ২৭ এপ্রিল বুধবার দুপুরে নিজের গাছের ফল খাওয়ার জন্য পাড়তে গেলে বড় ছেলে শহিদুর রহমান, তার স্ত্রী (পুত্রবধূ) সেলিনা বেগম, নাতনি সাদিয়া আফরিন ও বহিরাগত লোকজন নিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আমার ওপর হামলা চালায়। তারা লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আমার বাম হাত ভেঙে দেয়। এ সময় ছোট ছেলে আরিফুর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানরা বাধা দিলে তাদেরকেও পিটিয়ে আহত করে। গুরুতর আহতাবস্থায় স্থানীয়রা ও বড় মেয়ে মর্জিনা বেগম আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা শেষে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
মা হয়ে ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। বাধ্য হয়ে সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতিদের বিরুদ্ধে গত ২৮ এপ্রিল কুমিল্লা আমলি আদালতে মামলা করি। তার বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে শহিদুর রহমান গত ৪ ডিসেম্বর আমাকে মারধর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বসতঘরে তালা দিয়ে ছোট ছেলে আরিফুর রহমানসহ আমাদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে পাশের বাড়ির সম্পর্কে (দেবর-ভাসুর) তাজুল ইসলাম ও লতিফ মিয়ার বাড়িতে বসবাস করছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শহিদুর রহমান ও আরিফুর রহমানের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে আদালতে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। তাদের সম্পত্তির বিষয় নিয়ে সামাজিকভাবে সালিশ-বিচারও হয়েছে কয়েক বার। বাবার সম্পত্তি মায়ের কাছ থেকে ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনি তাদের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
কিন্তু মা বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানদের এই জমি লিখে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে সন্তানের পরিবারের বিরোধ দেখা দেয়। বৃদ্ধা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতিদের বিরুদ্ধে গত ২৮ এপ্রিল কুমিল্লা আমলি আদালতে মামলা করেছেন। লাকসাম থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
এ ছাড়া শহিদুর রহমান ও আরিফুর রহমানের পৃথকভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
অভিযুক্ত শহিদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনার বিষয় ফোনে কথা না বলে সরাসরি কথা বলি, আপনি সন্ধ্যায় বাজারে আসেন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তিনি সব জানেন।
বাকই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল আবুল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এখন ব্যস্ত আছি এ বিষয় পরে কথা বলব ভাই।
/এএল