প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০৪:১৩ পিএম
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় হলেও নীলফামারীর রেলওয়ের শহর সৈয়দপুর হানাদার মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। গোটা দেশ হানাদার মুক্ত হওয়ার পরও অবাঙালিদের অবরুদ্ধতার কারণে সৈয়দপুরে কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রবেশ করতে পারেনি। এইদিনে নীলফামারী জেলার সীমান্ত এলাকা হিমকুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে প্রবেশ করে সৈয়দপুর শহরে। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ঢুকে পড়ে শহরে কয়েক হাজার লোক। শহরের পৌরসভা ভবনে ও অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা।
পাক হানাদার দিবসটি স্মরণ করে রাখতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, প্রজন্ম ৭১, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যৌথভাবে বিজয় র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সৈয়দপুরে কতজন শহীদ হয়েছেন এর কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে, এই সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার অনেকে বলেন সৈয়দপুরে ৪০ হাজার বিহারীর অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার যুদ্ধাপরাধী বলে স্বীকৃত। অথচ এখানে যুদ্ধপরাধী ও রাজাকারেরও কোনো তালিকা তৈরি হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো কমিটিই এটি করতে পারেনি। আর এর পেছনের কারণ হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের ভোটের রাজনীতি।
১৯৭১ এর ১৩ জুন শহরের গোলাহাট এলাকায় নির্মমভাবে হত্যা করা ৪৪৭ জন নারী পুরুষকে। শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে ওই সময়ে অবাঙালিদের বসবাসের কারণে সেখানেই বিভিন্ন জায়গা হতে বাঙালিদের হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। অদ্যাবধি ওই স্থানটিকে চিহ্নিত করা হয়নি এবং নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিন্তম্ভ। গোলাহাটে স্থানীয় উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌদ্ধ নির্মাণ করা হলেও সৈয়দপুর স্টেডিয়াম গণহত্যার স্থানটি মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে।
অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর ভারতের হীম কুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে প্রবেশ করে সৈয়দপুর আক্রমণ করলে অবাঙ্গালী ও খান সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ দিন সৈয়দপুর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। এই বিজয়ে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ করে। এ দিন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম কাজী ওমর আলী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ মিছিল হয় এবং নেতৃবৃন্দ প্রথম সৈয়দপুর পৌরসভা কার্যালয়ে ও আওয়ামী লীগ অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।
সজিব/এএল