• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা জীবিত, ছেলের কবরের ফলকে মৃত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২২, ০৩:৪৭ পিএম

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মা জীবিত, ছেলের কবরের ফলকে মৃত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

বিজয়ের ৫১ বছর পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছেলের কথা স্মরণ করে প্রতিনিয়ত অন্ধ মা কবরের পাশে রেলিং ধরে বসে থাকেন। কিন্তু তিনি জানেন না ছেলের কবরের নাম ফলকে তাঁকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিমের প্রতিকী কবরের নাম ফলকের ঘটনা।

তথ্যে জানা যায়, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চরে সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানী সেনাকে হত্যার পর ফজলুল করিম শহীদ হন, এরপর সতীর্থরা তাকে সেখানেই দাফন করেছিলেন। বর্তমানে সেই কবরও যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পুত্রের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যাওয়া মাকে কেউ জানায়নি মৃত্যুর সংবাদটি। কিন্তু গত দু’বছর আগে সরকারিভাবে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর তৈরির সিদ্ধান্ত হলে ফজলুল করিমের বাড়িতে একটি প্রতীকী কবর স্থাপন করা হয়। নবতিপর শহিদমাতা আছিরন বেগম তখন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত কবরের কাছে গিয়ে বসতেন। ছুঁয়ে দেখতেন দীর্ঘ সময় নিয়ে ধীরগতিতে তৈরি হওয়া প্রিয় সন্তানের কবরের রেলিং। বর্তমানে জেলায় একমাত্র বেঁচে থাকা শহীদের মা আছিরন বেগম কিন্তু এখনও জানেন না কবরের ফলকে তাকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর ফুলছড়ি উপজেলার কালা সোনার চরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় গ্রামের কলেজ ছাত্র ফজলুল করিম। পরবর্তীতে সরকারি অনুদানসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পেলেও নিজ কুটিরেই বাস করেন শহীদ মাতা আছিরন বেগম। সম্মুখ সমরে শহীদ হওয়ার সেই চরটিকে স্বাধীনতার পর ফজলুপুর ইউনিয়ন নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতীকি কবরের নামফলকে লেখা আছে ‍‍‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি, নাম: শহীদ ফজলুল করিম, পিতার নাম: মৃত্যুঃ দেলোয়ার হোসেন, মাতার নাম: মৃত্যুঃ আছিরন বেগম, গ্রাম: পুনতাইড়, পোস্ট: মহিমাগঞ্জ, উপজেলা: গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা। সেক্টর নং- ১১, গেজেট নং- ৩৯১, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।‍‍’

শহীদ ফজলুল করিমের ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরেও মা পথ চেয়ে বসে থাকতেন ফজলুল ভাইয়ের জন্য। এখন প্রতিদিন প্রতীকী কবরের পাশে বসে থাকেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কবরের নাম ফলকে মায়ের নামের আগে মৃত লেখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো পাত্তাই দেননি। আর ঠিকাদার ছাড়া সংশ্লিষ্ট কেউ এখানে আসেননি কখনও।

 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের ফলকে ভুল তথ্য লেখার বিষয়টি জানা ছিল না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। খুব দ্রুত ফলকের ভুল তথ্য সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এনএমএম/এএল

 

আর্কাইভ