• ঢাকা শনিবার
    ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অচল বরেন্দ্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প, বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২, ১১:৫৫ পিএম

অচল বরেন্দ্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প, বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বরেন্দ্র সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

পানযোগ্য পানির প্রধান উৎস ভূ-পৃষ্ঠের পানি, ভূ-গর্ভস্থ পানি এবং বৃষ্টির পানির মধ্যে শেষোক্ত উৎস দুটোর পানি কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই ব্যবহার করা যায় পানীয়জল হিসেবে। আবার ভূ-গর্ভস্থ পানি বৃষ্টির পানির তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ও নিরাপদ। যেহেতু ভূ-গর্ভস্থ পানি সহজলভ্য ও নিরাপদ তাই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষ এই পানির উপর বেশি নির্ভরশীল।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯৭ ভাগ মানুষ নলকূপের পানি পান করলেও গভীর নলকূপ হতে গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বধানে চন্ডিপুরের পাঁচপীর বাজারে নির্মাণ করা হয় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প। কিন্তু বছর কয়েক আগে কাজ শেষে দুই-একবার পানি সরবরাহ করার পর বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকায় সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কয়েক‍‍’শ মানুষ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উপজেলার চন্ডিপুর ও ছাপরহাটিতে গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প দুটির কাজ শুরু হয় ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে। প্রতিটি প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৫ লাখ টাকা। যার বাস্তবায়ন করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন করা হয় চন্ডিপুরের পাঁচপীর বাজারের পশ্চিম-উত্তর কর্ণারে। যেখানে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য রয়েছে ৩টি ছাঁকনি, রয়েছে ছাঁকনি শেষে পানি গিয়ে পড়ার একটি বড় চৌবাচ্চা। ওই চৌবাচ্চা থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে রাখার জন্য রয়েছে বেশ বড় দুটো ট্যাংক। এ ছাড়াও রয়েছে পরিচালনার জন্য একটি পাকা ছাদ বিশিষ্ট ঘর। পানি সরবরাহের জন্য বাজার ও এর আশপাশের প্রায় দুই শতাধিক বাড়িতে স্থাপন করা হয় সরবরাহ লাইন। কিন্তু বছর কয়েক আগে কাজ শেষে ভোক্তাদের বাসাবাড়িতে দুই-একবার পানি সরবরাহ করা হলেও এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে প্রকল্পটি। এতে বঞ্চিত হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি থেকে।

এদিকে, ছাপরহাটি ইউনিয়নের প্রকল্পটি কোথায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সঙ্গে। কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচপীর আয়রন ও আর্সেনিক রিমোভাল প্লান্টটির দেয়ালে নেই কোনো বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা তথ্য। প্লান্টটির সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও গেটে নেই কোনো তালা, নেই রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা।

স্থানীয়রা বলছেন, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে তা জানা নেই। আর দুই-এক বার পানি সরবরাহ করা হয়েছিল বটে, কিন্তু ঠিক কী কারণে সেটি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে তাও অজানা তাদের।

চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে। এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সাদুল্লাপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী আবুল বাসার শেখ বলেন, ‍‍‘আমি এ এলাকায় নতুন। তাই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প দুটির বাস্তবায়ন ব্যয় সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে পাঁচপীর বাজারের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি অতিরিক্ত আয়রন থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে। আর ছাপরহাটি ইউনিয়নের প্রকল্পটির অবস্থান কোথায় তা আমার জানা নেই।‍‍’

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‍‍‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আমাদের এ ধরনের কোনো প্রকল্প নেই। আর ১০-১২ বছর ধরে এ ধরনের কোনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।‍‍’

 

এনএমএম/এএল

আর্কাইভ