প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২, ০৯:৫৫ পিএম
কুমিল্লার বিএনপির গণসমাবেশের বাকি আর মাত্র চার দিন। আর এই সমাবেশ উপলক্ষে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে নগরীর টাউন হল মাঠ পর্ষন্ত যেন ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনের উৎসব চলছে।
এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সমাবেশস্থল পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ, ভবনের দেয়াল আর ল্যাম্পপোস্টের লাগানো হচ্ছে ব্যানার। রঙ-বেরঙের এসব ফেস্টুন ব্যানারে শোভা পাচ্ছে দলের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবির কথা। এ ছাড়া গণসমাবেশের সফলতা কামনা করেও টানানো হয়েছে অসংখ্য পোস্টার হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ ও গণসযোগ করছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা ।
সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, টাউন হল মাঠে চলছে ব্যানার ও পোস্টার লাগানোর কাজ। বিএনপির চেয়্যারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মুক্তি দাবি করে পোস্টার লাগাচ্ছে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া চলছে মাঠের মঞ্চ বানানো প্রস্তুতি কাজ। সকালে নগরীর টাউন হল মাঠ পরিদর্শন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন। এ ছাড়া একই সময় নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন কুসিকের মেয়র পদে নির্বাচন করা বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কাউসার।
এদিকে কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল সাক্কু নেতাকর্মীদের থাকার জন্য ৭৮টি ফ্লাট ব্যবস্থা করছেন। মনিরুল হক সাক্কু অনুসারীরা নগরী টাউন মাঠের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চের পাশে অবস্থা নিয়েছেন। তবে নগরবাসী বলছে, নগরীতে এত বেশি পোস্টার-ব্যানার গত এক দশকে দেখা যায়নি। ফেস্টুন টাঙ্গাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা মহানগর বিএনপি ছাত্রদল সভাপতি রিয়াজ আহমেদ বলেন, নতুন উদ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সমাবেশস্থলে ব্যানার টাঙ্গিয়েছি। আমরা এ সমাবেশ সফল করতে ছাত্রদল দিনরাত মাঠে কাজ করছি।
কুমিল্লা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শিশির বলেন, আমাদের কুমিল্লায় বিভাগের সকল ইউনিটে নেতাকর্মীরা, ব্যানার-ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চান, এটা তো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অংশ হয়ে উঠেছে। আসলে এই সমাবেশ দলের নেতা-কর্মীদের জন্য একটি উদযাপনের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। আশা করি কুমিল্লা বিভাগীয় সমাবেশ কুমিল্লার রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় বৃহত্তর সমাবেশ হবে।
কুমিলায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাজী আনারুল হক বলেন, কুমিল্লায় মানি বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্রে করে নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ উৎসব দেখা দিয়েছে। এই সমাবেশ হবে আগের সকল সমাবেশ থেকে বৃহত্তম সমাবেশ। কাল থেকে নেতাকর্মীরা টাউন হল মাঠে অবস্থা করবে। নগরীর ফয়সাল নামের পথচারী বলেন, আমরা শহরের রাজপথে বিএনপির ব্যানার-পোস্টার দেখছি এবং দেখে আমাদের কাছে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে মনে হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী দিনগুলো দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য শান্তিপূর্ণ হবে।
এদিকে বিভাগীয় শহর কুমিল্লা নগরীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই নগরীসহ গোটা জেলা, উপজেলা, পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল উত্যপ্ত হয়ে উঠেছে।
সর্বশেষ দাউদকান্দি উপজেলা গণসমাবেশের লিফলেট বিতরণ করা এক নেতা কর্মীর উপর হামলা করে আহত করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া বি-বাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে লিফলেট বিতরণকালে এক যুবদল নেতাকে আহত করা হয়, পরে হাসপাতালে নেয়া হলে যুবদল নেতা শাকিলের মৃত্যু হয়। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ রয়েছে, নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালাচ্ছে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, বিএনপি তাদের সমাবেশ করবে, আমরা তাতে বাধা দেব না।
তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে আমার তাদের প্রতিরোধ করবো বলে হুঁশিয়ারি দেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, হঠাৎ করে মিছিল, সমাবেশ ও হামলার ঘটনা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি চক্রান্ত। আওয়ামী লীগ কোনোভাবে আমাদের আটকাতে না পেরে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২৬ নভেম্বরের গণসমাবেশ হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী ইয়াছিন বলেন, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা বিএনপির সবাবেশে আমরা অনুমতি পেয়েছি। তবে রাতেরবেলা আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা নেতাকর্মীদের দুমকি হুমকি দিচ্ছে।
এগুলো করে সমাবেশ আটকানো যাবে না। পরিবহন ধর্মঘট দিলে কোনো লাভ হবে না, কর্মীরা কোনো বাঁধাই মনে করছেন না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো বাধাই বিএনপির নেতাকর্মীদের রুখতে পারবে না।
এএল/