প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ০২:২৩ এএম
মোঃ হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরার উদ্দমী এক যুবক। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী না হয়েও সাত বছর ধরে নিজ হাতে আরবি ভাষায় তিনি কোরআন শরীফ লিখেছেন। হাতে লেখা এই কোরআন শরীফ আকারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বলে তিনি দাবী করেন। আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ আলেমরাও তার কোরআন পড়ে নির্ভুল বলে প্রশংসা করেছেন।
হাবিবুরের হাতে লেখা এই কোরআন শরীফটিতে তিন হাজার চারশ আটটি আর্ট পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। এত ১৪২ টি পাতা আছে। হাতে লেখা এ কোরআন শরীফটির ওজন ৪০৫ কেজি। আকার ৩৩৫ সেন্টিমিটার। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ্য ২৬৪ সেন্টিমিটার। লাল নীল সবুজ ও কালো রঙের চারটি কলাম ঐশি বাণীর শোভা বাড়িয়েছে। সূরা বা পারা কলামের যেখানে শেষ হয়েছে সেই কলামের বাকি অংশে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম। মার্জিন ও পেইজ ডিজাইনের জন্য মধুর এ নামটি এসেছে তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার বার।
হাবিবুরের মা ফিরোজা পারভীন জানান, ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারীতে আমার ছেলে এই পবিত্র কোরআন হাতে লেখা শুরু করে। এ বছরের ২৩ শে সেপ্টেম্বর সম্পন্ন করে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করে সারা রাত জেগে সে এই কোরআন শরীফটি নিজের হাতে লিখেছে। এমন অনেক দিন গেছে সারা রাত জেগে লিখে তার পরে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমাতে গেছে। সন্তানের এমন ভাল কাজের বিনিময়ে মহান রাব্বুল আলামিন যেন তার সন্তানের জীবনে আরও ভাল কিছু করেন এমনটায় দোয়া করেন তিনি।
সাতক্ষীরার আশাশুনি খরিয়াটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, হাবিবুর মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারিম বৃহদাকারে লিখছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক আয়াত তেলাওয়াত করেছেন। দেখেছেন এগুলো অতি সুন্দর করে নির্ভুল ভাবে লেখা হয়েছে।
দীর্ঘ ৬ বছর ৮মাস ২৩দিনে ১৪২ পাতায় ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াত লেখা হয়েছে। সুরা বা পারা কলামের যেখানে শেষ হয়েছে সেই কলামের বাকি অংশে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম। মার্জিন ও পেইজ ডিজাইনের জন্য মধুর এ নামটি এসেছে তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার বার। ৩০ পারার ঝকঝকে হরফে লেখা ১১৪টি সুরা’র এই কোরআন দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি ছাপা নাকি হাতে লেখা।
হাবিবুর জানান, সে কখনও মাদ্রাসায় যায়নি। ইউটিউব দেখে আরবিসহ কয়েকটি ভাষা আয়ত্ব করেছেন। মহান আল্লাহর বাণীকে ভালোবেসে তিনি আরবি ভাষাতে নিজের হাতে মহাগ্রন্থ আল কোরআন লিখেছেন। তিনি নিজ সাধনায় মুখস্ত করেছেন কোরআনের দুইটি পারা।
২০১৩ সালে তিনি সাতক্ষীরা শহর সমাজসেবা অফিসে কম্পিউটার ইনস্ট্রাকটর ছিলেন। তিনি সময় সমাজের অসহায় অবহেলিত গরীব মানুষের দূরবস্থা দেখেছেন। তাদের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবার জন্য কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে। তখন থেকে তিনি চিন্তা করেন এমন কিছু করবেন যেটি বিশ্ব রেকর্ড গড়বে। সেই চিন্তা থেকেই তার মাথায় উদ্ভাব হয় বিশ্বের সব চেয়ে বড় কোরআন তিনি হাতে লিখবেন।
হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল এলাকার মোঃ আজিজুর রহমান এর পুত্র। ২০০৩ সালে তিনি সাতক্ষীরা পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। ২০০৫ সালে এইচএসসি ও পরবর্তিতে এলএলবি সম্পূর্ণ করেছেন।
শেখ দীন মাহামুদ/ আব্দুল বারী