প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২, ০৮:৩১ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী বাজার থেকে পাড়িয়া ইউনিয়নের পাড়িয়া বাজার পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটার পাকা রাস্তা সংস্কার কাজের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার দুপুরে নিম্নমানের কাজ করতে বাধা প্রদান করতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজন ও স্থানীয়দের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁচদোয়াল গ্রামের ডালু, উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যসহকারী আবু সুফিয়ান ও ঠিকাদারের সহকারী জাহাঙ্গীর আলম আহত হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম ও সুফিয়ান বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসার জন্য।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, পুরো রাস্তার সংস্কার করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের ইট ব্যবহার করছে। তা ছাড়া ঠিকমত রাস্তার দুপারে মাটি প্রদান না করেই দায়রাসারা করছেন। নিম্নমানের কার্পেটিং করা হচ্ছে। যা তিন মাসের মধ্যেই উঠে যাবে। এসব কাজে বাধা প্রদান করতে গিয়ে ঠিকাদারের লোকজন আমাদের ওপর চড়াও হয়।
অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান এন্টারপ্রাইজের সহকারী আসাদুজ্জামান বলছেন, রাস্তা সংস্কার কাজে বাধা সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি করতে আসার কারণেই হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি বালিয়াডাঙ্গী থানায় ওই গ্রামের ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তবে নিম্নমানের কাজের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর প্রচুর দাম বেড়েছে। ইট পাওয়া যাচ্ছে না। পাবনা থেকে ইট এনে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। দু-একটা ইটে সমস্যা রয়েছে।
লাহিড়ী এলাকার বাসিন্দা নয়ন জানান, নিম্নমানের কার্পেটিং, খোয়া ইটের টুকরো ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তার সংস্কার কাজে। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে মারধর করেছে ঠিকাদারের লোকজন। ডালু নামে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি গেলে ঠিকাদারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে আমরা চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিলাম, ঠিকাদার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রাস্তাটির সংস্কার কাজ পরিদর্শনের অনুরোধ করেন তিনি।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে রাস্তায় নিম্নমানের কার্পেটিং ও খোয়া ইটের টুকরো বিছানোর দৃশ্য নজরে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা পজিরুল ইসলাম বলেন, তিন নম্বর ইট দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদার। এসব দেখার যেন কেউ নাই। আমরা কিছু বলতে গেলে ধমক দেখায়।
রাস্তার পাশের বাসিন্দা আলিম উদ্দীন নামে ৭০ বয়সী এক বৃদ্ধ বলেন, এক ঠিকাদার রাস্তা সংস্কার করবে। ছয় মাস পর আরেক ঠিকাদার সেই রাস্তা পুনরায় সংস্কার করবে। একবারে ভালো কাজ করলেতো রাস্তার কার্পেটিং উঠবে না। রাস্তার কার্পেটিং না উঠলে ঠিকাদার কোনো রাস্তার কাজ করবে। তাই রাস্তার নির্মাণ আর সংস্কারের নামে সরকারি টাকা লুটপাট করছে সবাই।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চাড়োল ইউনিয়নের লাহিড়ী বাজার থেকে পশ্চিম দিকে পাড়িয়া বাজার পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার হচ্ছে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে। ইমরান হোসেন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও মেসার্স রহমান এন্টারপ্রাইজের হয়ে সহকারী ঠিকাদার আসাদুজ্জামান লাভলু এ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, নিম্নমানের কাজ ও রাস্তা সংস্কারে বাধা দুটো অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। রাস্তার কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিল পাবে না। অন্যদিকে সরকারি কাজে বাধা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) মামুন জানান, রাস্তায় হাতাহাতির ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
এএল/