প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৪:৪৭ পিএম
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনার পর এবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হবে বরিশালে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সমাবেশ করবে দলটি। আর এই সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এদিকে বিএনপির এই সমাবেশের আগে সব ধরনের গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বরিশাল।
আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শনিবার সমাবেশ হলেও সেজন্য আগেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন বহু নেতাকর্মী। মাটিতে ত্রিপল আর বস্তা বিছিয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা।
পরিবহন ধর্মঘটের ডাকার পর বিভাগের বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যোগদানের জন্য উপযুক্ত সময় ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন পরিবহনে করে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এসে উপস্থিত হন।
ভোলার বিএনপি কর্মী মোস্তফা বলেন, ‘ভোলা থেকেই কয়েকশ মানুষ এখানে আছি। আমাদের উপজেলার নেতারা আমাদের খাওয়াচ্ছেন। ট্রলার ভাড়া দিয়েছেন। কাউখালীর আরেক যুবদল কর্মী রাসেল আকন বলেন, আমাদের জন্য নেতারা পর্যাপ্ত কম্বলের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যত মানুষ সবাইকে কম্বল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে অনেকেই কষ্ট করছেন।’
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বরগুনা থেকে ৪১টি ট্রলার নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করেন দলের কর্মীরা। তাদের দাবি, সড়কপথে কোনোভাবেই বরিশাল যেতে না পেরে শেষে এ পথ বেছে নেন তারা।
বরিশাল থেকে অভ্যান্তরীণ ও দূর পাল্লার বাস, ইজিবাইক চলাচল আগেই বন্ধ ঘোষণা করেন মালিক-শ্রমিকরা। এরপর বুধবার রাতে বন্ধ করা হয় স্পিডবোট সার্ভিস। আর বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হয়। আর বিকেলে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচলও দু’দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুজ্জামান জলিল বলেন, শহরে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় মাইক্রো চালকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে, যদি হামলা হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতির মুখে যেন না পড়তে হয় এজন্যই আপাতত না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল মূলত পূর্বঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় বরিশাল-ভোলা রুটে যাতায়াতাকারী নিয়মিত যাত্রীদের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না। তবে বরিশালের লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ বন্ধের কারণ জানাতে পারেনি।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আবু জাফর দিদার বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো রকম নৌকা দিয়ে ফেরিতে পার হয়ে বরিশাল পৌঁছেছি। তাও আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে ফেরির স্টাফরা জোর করে নামিয়ে দিয়েছে।
লঞ্চের মতো স্পিডবোট বন্ধেরও সঠিক কারণ জানা যায়নি। বুধবার রাতে ভোলা-বরিশাল রুটের লাইন সুপারভাইজার তারেক শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা আমরা দিইনি। ভোলা মালিক সমিতির লোকজন এ ঘোষণা দিয়েছেন।
বরিশাল নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোর ‘খোঁজ-খবর’ নিচ্ছে পুলিশ। হোটেল মালিকরা বলছেন, নতুন করে বোর্ডার বা অতিথি তোলার ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
হোটেল শামস-এর ব্যবস্থাপক মানিক হাওলাদার বলেন, নতুন বোর্ডার নিতে পারব না এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে প্রশাসন থেকে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, কক্ষ ভাড়া দেওয়ার যে নীতিমালা রয়েছে তা যেন অনুসরণ করা হয়। ভাড়া যিনি নেবেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি তুলে রাখাসহ হালনাগাদ তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখতে বলা হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, হোটেল তদারকি আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। হোটেল কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে নিয়ম অনুসরণ করছেন কি না এসব খোঁজখবর নিতেই হোটেলে যাওয়া হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এআরআই