প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২২, ১২:৫০ এএম
২৪ অক্টোবর, সোমবার। ভোর থেকেই বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো বাগেরহাট জেলা। সন্ধ্যার সাথে সাথে আতঙ্ক বাড়তে থাকে বাগেরহাটবাসীর। বিদ্যুৎ না থাকায় ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয় জেলার সর্বত্র।
এরই মাঝে সন্ধ্যা থেকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান সম্ভাবা মায়েরা আসতে শুরু করেন। গভীর রাত পর্যন্ত ৮জন সন্তান সম্ভাবা নারী আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বিদ্যুৎ বিহীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝড়ের রাতে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও সেবিকাগণ খুবই আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে সেবা প্রদান করে। মোবাইল ও মোববাতির আলোয় আপ্রান চেষ্টা করে রাত তিনটা পর্যন্ত সাতজনকে নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হন তারা। শারীরিক জটিলতা থাকায় ভোর চারটার দিকে সোনিয়া নামের এক সন্তান সম্ভাবা মাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
সন্তান জন্ম দেওয়া মায়েরা হলেন, মোংলা উপজেলার সিগনাল টাওয়ার এলাকার জাকির হাওলাদারের স্ত্রী মনিরা (৩৩), মাকোরঢোন এলাকার বাসিন্দা সোহাগ সরদারের স্ত্রী মুক্তা (১৯), আরাজী মাকোরঢোন এলাকার মেহেদী হাসানের স্ত্রী বনানী (১৯), বাঁশতলা এলাকার মাছুমের স্ত্রী নাঈমা (২০), নারকেলতলা এলাকার মজিবর হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া (৩০), মালগাজী এলাকার মানিক শেখে স্ত্রী মিলা (২৬) ও ভাসানী সড়কের আবুল হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম (৪২)। এরা সবাই সুস্থ আছেন। ঝড়ের রাতে এমন সেবা পেয়ে খুশি প্রসূতি মা ও তাদের স্বজনরা।
ঝড়ের রাতে সন্তান জন্ম দেওয়া মা শাহনাজ বেগম বলেন, রাতে ব্যাথা বাড়লে খুব ভয় পেয়েছিলাম। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাব, কি করবো? পরে অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তারদের আন্তরিকতায় আমরা খুব খুশি হয়েছি।
এ রাতে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. শাহীন, মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুরজাহান নিশাত, মিডওয়াইফ আয়শাসহ সেবিকা ও অন্যান্য কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুরজাহান নিশাত বলেন, “অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবেই প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করেছি। আমাদের বিদ্যুৎ ছিল না, ওই রাতে জরুরী সিজার করারমত অবস্থা আমাদের ছিল না। তাই আমরা চেষ্টা করেছি মায়েদের সুস্থ্য রেখে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব নিশ্চিত করতে। সকলের সহযোগিতায় সাত জন মাকে এখানে নরমাল ডেলিভারি করিয়েছে। কিন্তু সোনিয়া নামের এক সন্তান সম্ভাবা রোগীকে বাধ্য হয়ে ভোর চারটার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। কারণ ওনার কিছু জটিলতা ছিল। সব মিলিয়ে বিপদের সময় মানুষের সেবা করতে পেরে ভাল লাগছে।”
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. শাহীন বলেন, হাসপাতালে বিদ্যুৎ ছিলনা। আবার জেনারেটরেও তেল ছিলনা। তারপরও সবাই মিলে সাত প্রসূতি মায়ের নরমাল ডেলিভারি নিশ্চিত করেছি। ওই রাতে দায়িত্ব পালন করা সবাই খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এই কর্মকর্তা।
এসএই