• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার গাছিরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০৭:৩২ পিএম

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার গাছিরা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

আর কিছুদিন পরই শীত আসছে। শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার গাছিরা। 

দেশজুড়ে চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে। তাই শীতের মৌসুম শুরু না হতেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা।

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায় আবহাওয়া। শীত আসার আগেই সবকিছুই যেন বদলাতে শুরু করেছে। এখন থেকেই চুয়াডাঙ্গার খেজুর গাছিরা রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ জেলার অধিকাংশ গ্রামেই খেজুর রস সংগ্রহের আগাম প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে গাছ ছাঁচা-ছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন। 

যে নলের মাধ্যমে রস ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ে তাকে নলি বলা হয়। গাছ ছাঁচা-ছোলার কাজ শেষ হলে নলি বসানোর কাজ শুরু হবে। কিছুদিন পর প্রস্তুতকৃত খেজুর গাছে রস সংগ্রহ করার জন্য ভাড় বাঁধানো হবে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে প্রতিদিন বিকেল বেলা গাছ কেটে নলির মুখে ভাড় বসিয়ে পরের দিন ভোরে গাছ থেকে খেজুরের রসসহ ভাড় নামিয়ে ফেলে। এভাবে প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে সেই রস থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার চার উপজেলায় এ বছর আড়াই লাখ খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব গাছ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ গ্রামের খেজুরগাছি (কৃষক) রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর ৪০টির মতো খেজুরগাছ পরিচর্যা শুরু করছেন তিনি। আগাম রস আনতে পারলে, রস এবং গুড়-পাটলির ভালো দাম পাওয়া যায়’।

চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি গ্রামের গাছি ফজর আলী বলেন, ‘শীত আসার আগে এই সময় থেকে গাছ পরিচর্যা ও কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি। এরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ শুরু হবে’।

একই গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, ‘খেজুর গাছ কাটাও একটা পেশা। শীত মৌসুমে অনেকে খেজুর গাছ কেটে বাড়তি আয় করে। আমরা প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টা করে গাছ কাটছি। এতে করে প্রত্যেকের প্রতিদিন গড় আয় হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা’।

ডিঙ্গেদহ শংকরচন্দ্র গ্রামের বুলু মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০টি গাছ প্রস্তুত করি। প্রতিটি গাছ থেকে এক ভাড় রসে এক কেজি গুড় তৈরি হয়। ৫০-৬০ ভাড় রস পেলেই প্রায় ৫০ কেজি গুড় উৎপাদন করা যায়’।

গাছিরা আরও বলেন, ‘খেজুর গাছ পরিচর্যা এবং ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ খুব কঠিন কাজ। ঝুঁকি নিয়ে গাছ কাটা হয়। এত কষ্ট করেও গুড়ের সঠিক দাম না পাওয়া এবং গুড়ের বাজারে ভেজাল মেশানোর কারণে বিক্রয় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখন অনেক চাষি গুড় বানানো বন্ধ করে দিচ্ছেন’।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার গুড় সুস্বাদু এবং ভালো মানের হওয়ার কারণে দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদা। গুড়ে ভেজাল মেশানোর অপকারিতা কৃষকদের মধ্যে অবহিত করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের ছয় মাস প্রায় ২-৩ হাজার পরিবার গুড় উৎপাদনের উপার্জন দিয়ে জীবনযাপন করে। এসব কৃষকদেরকে গাছ কাটা ও সংরক্ষণ করা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করব’।
 

এএল/

আর্কাইভ