• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ময়মনসিংহে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধকে তালাবদ্ধ রাখেন স্ত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০৯:২৫ পিএম

ময়মনসিংহে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধকে তালাবদ্ধ রাখেন স্ত্রী

ময়মনসিংহ ব্যুরো

ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়েকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে কৌশলে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের জমি লিখে নিয়ে অসুস্থ স্বামীকে না খাইয়ে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায়। অসহায় ওই ব্যক্তি এখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে বাদী হয়ে নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মৃত রহমত উল্লাহ মুন্সীর ছেলে আব্দুর রশিদ (৬৫) ২৮ বছর আগে এক কন্যাসন্তান আসমা আক্তারসহ স্ত্রী জোসনা আরা বেগমকে তাড়িয়ে দেন। পরে তিনি রাজৈ গ্রামের সৈয়দ আলীর মেয়ে নার্গিস আক্তারকে বিয়ে করেন। এই ঘরেও রয়েছে, এক মেয়ে রোকসানা (২০) ও ছেলে নাঈম (৯)।
 

সম্প্রতি রোকসানাকে বিয়ে দেয়া হয় মেদুয়ারী ইউনিয়নের হলরবাজার এলাকার আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়ার সঙ্গে। এর আগেও ওই মেয়েকে ১২ বছর বয়সে অন্য এক ব্যক্তির কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। পরে কিছুদিন ঘর সংসার করিয়ে ওই ব্যক্তির বহু টাকা-পয়সা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। 

 

এদিকে বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়ে জামাই বাবুলকে নিয়ে নার্গিস আক্তার ফাঁদ পাতেন স্বামীর সব জমি লিখে নেয়ার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর দলিল লেখক ফিরোজ শাহীর যোগসাশজে ভরাডোবা মৌজার সিএসএসএ (আরওআর) নম্বর ২১, হাল দাগ ৪৫, বিআরএস ৩১৩ নম্বর দাগে মহাসড়ক সংলগ্ন প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ১২ শতাংশ জমির হেবা ঘোষণা দলিল সম্পাদন (নম্বর-৭৫০৪) করেন।
 

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ঘরে বৃদ্ধ অসুস্থ আব্দুর রশিদকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। বাড়ির অপর একটি ঘরে তার শ্বাশুরি হেলানা খাতুন। এ সময় আব্দুর রশিদের ঘরটি খুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি জানান, তার মেয়ে নার্গিস বাড়িতে নেই। ঘরটি খোলা যাবে না। পরে স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক লোক জড়ো হয়ে চাপ সৃষ্টি করলে ঘরটি খুলে দেয়া হয়। তখন দেখা যায়, আব্দুর রশিদ ক্ষুধার যন্ত্রণায় মেঝেতে পড়ে আছেন। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। 

 

দীর্ঘদিন ধরে না খাওয়ার কারণে তার পেট গর্ত হয়ে আছে। ক্ষীণস্বরে শুধু বলছেন, একটু ভাত দাও, একটু ভাত দাও, আর কাঁদছেন। তখন তিনি বলেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী নার্গিস ও মেয়ে জামাই বাবুল ভয় দেখিয়ে ও জোড় করে টিপসই নিয়ে সব জমি কেড়ে নিয়েছেন। এখন তাকে ঘর বন্দী করে না খাইয়ে মারার চেষ্টা করছেন। আব্দুর রশিদের প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে আসমা আক্তার জানান, ২৮ বছর আগে যখন আমার বয়স দুই বছর, বাবা তখন মাকে তাড়িয়ে দেন। পরে দ্বিতীয় সংসার করেন তার বাবা আব্দুর রশিদ। 

 

তিনি গার্মেন্টে চাকরি করে অসুস্থ স্বামী আনিছুর রহমান এবং মেয়ে আনিকা (১১) ও ছেলে আকাশকে (৮) নিয়ে মানবেতন জীবন কাটাচ্ছেন। ৫/৬ মাস আগে বাবার সাড়ে ১৯ কাঠা জমি ৪০ লাখ টাকা বিক্রি করে তার সৎ মা নার্গিস ও চাচা আব্দুল বারেক আত্মসাত করেছেন। এখন তাকে পৈত্রিক সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ১২ শতাংশ জমি হেবা ঘোষণা দলিল করে নিয়ে যান। সব কিছু লিখে নিয়ে বর্তমানে তার বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবাকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রেখে, না খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করছেন। তিনি পৈত্রিক সম্পতি উদ্ধারসহ তার বাবাকে বাঁচানোর দাবি জানান।

 

রোকসানা পূর্বে জমি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তার চাচা আব্দুল বারেক তাদেরকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাবা আগেও বিয়ে করেছিল এবং এক মেয়ে আছে, তা তাদের জানা নেই। বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের ভাই আব্দুল বারেক জানান, তার ভাইয়ের জমি বিক্রি করে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ১২ শতাংশ জমি হেবা করে দেয়ার বিষয়টি তিনি পরে জেনেছেন। তবে তার প্রথম ঘরের মেয়ে সন্তান আসমাকে কিছু টাকা দেয়ার কথা বললেও তার কথা শুনেননি।

ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম তরফদার জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তিনি প্রথম ঘরের মেয়েকে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. আবদুর রহমান জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। বিষয়টি খুবই দু:খজনক। খোঁজ নিয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

 

এএল/

আর্কাইভ