প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০৬:৩২ এএম
আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, `বাউল সম্রাট ফকির লালন ছিলেন সুফি সাধক, সুস্রষ্টা মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি জাতপাত বিশ্বাস না করে মানবতার কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি মহামানব ছিলেন।`
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমিতে মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস-২০২২ উদযাপনের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, `যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ছিলো না কিন্তু তার চিন্তা, চেতনা ও উন্নত দর্শন ছিলো মানবের জন্য, সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য। লালন শাহ ছিলেন মানবতাবাদী, সুফি সাধক। তিনি অসাধারণ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। দুই হাজারের মতো গান লিখেছেন। সমাজ পরিবর্তনে মানবতার পক্ষে তিনি এসব গান গেয়ে গেছেন। এটা একটা অসাধারণ বিষয়।`
লালন বলেছেন, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’। এ পাখি হচ্ছে মনের পাখি। লালন বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যে এক মনের মানুষ বাস করে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আসল মানুষ বের করে আনতে হবে। মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবে। মানুষকে আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে চিন্তা-চেতনার প্রসার করে আমরা সোনার মানুষ হতে পারি-যোগ করেন তিনি।
লোক সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, `একসময় যে সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছিলো, ধর্মের গোড়ামি ছিলো আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আবারো আমরা সেই সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যে সমাজের বিরুদ্ধে জাতির পিতা লড়াই করেছিলেন।`
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমীর সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এমপি, আ. কা. ম. সরোয়ার জাহান এমপি, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, জেলা পরিষদ প্রশাসক রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য মো. শাহিনুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেস্ট ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন।
তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে লালন একাডেমী চত্বরে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। কালী নদীর তীরে অবস্থিত উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন লালন বিষয়ক আলোচনা, বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে লালনগীতি পরিবেশন এবং আখড়া বাড়ির বিশাল এলাকা জুড়ে বসেছে লালন মেলা। মাজারের অভ্যান্তরে আয়না মহলে চলছে সাধু-ভক্তদের লালনগীতি পরিবেশন। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীতি। স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। উৎসবকে ঘিরে পুরো একাডেমি চত্বরে খন্ড-খন্ড স্থানে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতারাও নেচে-গেয়ে গানের সাথে সাথে তাল দেয়। দর্শক-শ্রোতারা কখনো পিন-পতন নীরবতায় গান শুনছেন আবার কখনো গানের তালের সাথে সাথে করতালি দিয়ে মুখর করে তুলছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আখড়াবাড়ীর আঙ্গীনা।
এসএএস