• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০২:০১ এএম

তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দূরের স্বর্গকে নজরবন্দি করতে ঘুরে আসুন বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। দর্শন করুন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আকাশে যখন মেঘ থাকেনা, আবার কুয়াশা পড়া শুরুতে শুধু তখনই তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বরফে ঢাকা ধবল পাহাড়ের চূড়া দার্জিলিং-এর কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেঁতুলিয়া থেকে এত ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়না। সকাল ৮টা থেকে সূর্যকিরণ যখন তেজ বাড়তে থাকে তখন স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকাল দশটা পর্যন্ত বেশ ভাল দেখা যায়। তারপর আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ আবার যখন তির্যক হয়ে পড়ে বরফ পাহাড়ে তখন অপূর্ব মহিমায় অন্যরূপে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পর্যটকদের অবাক করতে থাকে তার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে। এ দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। দেখতে দেখতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে সংশয় হয়। ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে আপনার চোখে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের অবারিত সৌন্দর্য। ওই স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরো বেশি মনোরম হয়।

হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে ফেলা যাবে হিমালয় পর্বতমালার এই সুউচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই তো কাঞ্চনজঙ্ঘার সাক্ষাৎ পেতে ইতিমধ্যেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। হিমালয় পর্বতমালা থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরে তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকেই তারা উপভোগ করছেন সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ-মাধুর্য।

তেঁতুলিয়ায় দাঁড়িয়ে সোজা উত্তরে তাকালে চোখে পড়বে সুনীল আকাশ আর শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার মিতালি।

শরৎ ও হেমন্তের মেঘমুক্ত আকাশে প্রায় প্রতিদিনই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ ঘটে পর্যটকদের। তেঁতুলিয়া ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায় সূর্যের বর্ণিল আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত এই শৃঙ্গ। তাই ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ডাকবাংলো এবং মহানন্দা তীরে বসে প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডা। সন্ধ্যা নামার আগে ভিন্ন রূপের মহানন্দা হৃদয় কাড়ে পর্যটকদের। বাংলার বুক চিরে যে সূর্য ওঠে ভোরে, সন্ধ্যায় আবার সেই সূর্য ডুব দেয় প্রতিবেশী দেশের হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার আড়ালে।

প্রতিদিন ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে কাঞ্চন। তারপর ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাতে থাকে । নানা রং নিয়ে খেলা করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। জেগে ওঠার শুরুতে টকটকে লাল। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কমলা, তারপর হলুদ, তারপর সাদা। হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যায়। মেঘের আঁচলে লুকিয়ে পড়ে। মেঘ সরে গেলে আবার উঁকি দেয়। লুকোচুরির খেলা চলে সারা দিন। অপার সৌন্দর্য বিস্তার করে দাঁড়িয়ে থাকে এই মহামহিম। মনে হয় যেন হাসছে পাহাড়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সিকিম ও নেপালজুড়ে অবস্থিত। এটি বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৪ হাজার ১৬৯ ফুট।

কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে রয়েছে নানা রকমের লোককাহিনি। এর আশপাশের অঞ্চলটিকে বলা হয় পর্বত দেবতার বাসস্থান। দেবতার নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা ডেমন। এটি এক রাক্ষস। অনেকে বিশ্বাস করে, অমরত্বের রহস্য লুকানো আছে এই শ্বেত শুভ্র শৃঙ্গের নিচে।

তবে সব সময় দেখা মেলে না কাঞ্চনজঙ্ঘার। মেঘ আর কুয়াশা মাঝে মাঝেই আড়াল করে রাখে তাকে। তখন অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ জন্য অনেকে বলে থাকেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য কপালও লাগে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পঞ্চগড়ে পর্যটকের ভিড় হয় সবচেয়ে বেশি। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ট্যুরিস্টদের আনন্দকে আমরাও উপভোগ করছি। তাই তাদের নিরাপত্তা ও থাকা-খাওয়ার বিষয়গুলো উপজেলা প্রশাসন মনিটর করছে। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোসহ পর্যটন স্থানগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই আয়োজন চলমান।’

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা পিপিএম বলেন, ‘তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশের মাধ্যমে পর্যটকদের নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। দেশের আর সব জায়গার চেয়ে পঞ্চগড়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা অনেক ভালো। বিগত ৫০ বছরেও এখানে প্রকাশ্যে কোনো সহিংসতা ঘটেনি।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কাজী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। ট্যুরিস্টদের সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হচ্ছে, যেন তারা অনায়াসে সমতলের চা, মাল্টা, উচ্চফলনশীল আম, বিদেশি টিউলিপ বাগানসহ তেঁতুলিয়ার প্রাণ-প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন।’

কাঞ্চনজঙ্ঘার সাক্ষাৎ পেতে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন তিন বন্ধু রফিকুল, সুমন ও সাখাওয়াৎ। নিজ দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই বিশাল পর্বতশৃঙ্গ স্বচক্ষে দেখে রীতিমতো আবেগাপ্লুত তারা। জানালেন, আরও উন্নত মানের হোটেল, মোটেল, পার্ক তৈরি হলে তেঁতুলিয়া সত্যিকারের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে দাঁড়াতে পারবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পুলিশ হিসেবে নয়, পর্যটকদের আত্মীয় ভেবে তাদের সঙ্গে থাকছি, সহায়তা করছি সব বিষয়ে।’

জেডআই/

আর্কাইভ