• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মন্ত্রীর ড্রাইভারের কাছে মাফ চাইবি, তা না হলে মাদক মামলায় ফেঁসে যাবি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ১১:১০ পিএম

মন্ত্রীর ড্রাইভারের কাছে মাফ চাইবি, তা না হলে মাদক মামলায় ফেঁসে যাবি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর গাড়িচালকের সঙ্গে তর্ক করার অপরাধে এক কৃষককে তিন ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রীর গাড়িচালকের কাছে মাফ না নিলে মাদক মামলায় ফুল কমল নামে ওই কৃষককে ফাঁসানোর হুমকি দেয় পুলিশের এস আই নুরুজ্জামান।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানায় শুক্রবার রাত ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ফুল কমল (৪০) নামের ওই কৃষককে আটকে রাখা হয়। তার বাবার নাম যতিন্দ্র। তবে থানার ওসি বলেন, তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, জিঞ্জাসাবাদ শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষক ফুল কমলের বাড়ি কালীগঞ্জের দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা। পাশের কাশিরাম গ্রামের বাড়ি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের। তিনি লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য। তার গাড়িচালকের নাম আতিয়ার রহমান (৩৭) বলে জানা গেছে।

কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও কাশিরাম গ্রামের বাসিন্দা এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর এ ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে তার ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, গাড়িচালক আতিয়ার রহমান প্রতিদিনের মতো শুক্রবার প্রাতর্ভ্রমণে বের হন। শ্রীখাতা মৌজায় প্রধান সড়কে পৌঁছে দেখেন কয়েকজন গরিব কৃষক রাস্তাসংলগ্ন জমির পাশের ঘাস কাটছে গরুর জন্য। আতিয়ার তখন ঘাস কাটতে নিষেধ করেন। তখন ফুল কমল উত্তর দেন, ‘আমরা আপার (এস তাবাসসুম রায়হান) জমির ঘাস কাটতেছি? আপনার সমস্যা কী? আপনি নিষেধ করার কে?’ আতিয়ার তখন ফুল কমলের নাম ঠিকানা জানতে চান। এরপর আতিয়ার বলেন, ‘আমি কে, এটা সন্ধ্যার মধ্যে জানতে পারবি।’

তাবাসসুম রায়হান স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনার পর রাত ৯টায় কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামানের নির্দেশে শ্রীখাতা গ্রামের বাড়ি থেকে ফুল কমলকে ধরে নিয়ে যান স্থানীয় চৌকিদার। এরপর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়িচালক আতিয়ারের কাছে মাফ চাইতে বলেন এসআই নুরুজ্জামান। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ফুল কমলকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ফুল কমল সাংবাদিকদের বলেন, ‘থানায় আটক থাকার সময় আমাকে এসআই নুরুজ্জামান হুমকি দেন, কানে থাপ্পড় দেন আর বলেন, ‘থানা থেকে গিয়ে মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে মাফ চাইবি। তা না হলে মাদক মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, আমি চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগতেছি, কখন যে কি হয়। শনিবার সারাদিন আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। 

কালীগঞ্জ থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের গাড়ির ড্রাইভার আতিয়ার রহমানের মৌখিক অভিযোগে ফুল কমলকে স্থানীয় চৌকিদার দিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানায় ডেকে আনা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়নি।

গাড়িচালক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘রাস্তার ধারের ঘাস কাটতে দেখে আমি তাদের মানা করি, ওরা কর্ণপাত করেনি। এরপর আমি থানায় ফোন করেছি, বিষয়টি দেখার জন্য। এরপর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই ।

রাস্তাসংলগ্ন ওই জমি তার নিজের বলে জানিয়েছেন এস তাবাসসুম রায়হান। তিনি বলেন, এলাকার গরিব লোক সেখান থেকে গরুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে যায়। এতে আমার সমস্যা নেই। মন্ত্রীর গাড়িচালককে ওই দায়িত্ব কে দিয়েছিলেন? একজন গরিব মানুষকে থানায় এভাবে আটকে রেখে নির্যাতন কতটা যৌক্তিক ও বিধিসম্মত।

কালীগঞ্জ থানার ওসি এ টি এম গোলাম রসুল বলেন, 
‘ফুল কমলকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।’

 

এএল/

আর্কাইভ