• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

‍‍`নেই উন্নয়ন, হাটের আয় পৌরসভায় ব্যয়‍‍`

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ১১:৩২ এএম

‍‍`নেই উন্নয়ন, হাটের আয় পৌরসভায় ব্যয়‍‍`

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রতি বাংলা সনে হাটের আয় কোটি টাকার ওপর। তারপরও নেই কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া। ইজারা বাবদ পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হয় পৌরসভার নানা খাতে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় দিন দিন অস্তিত্বই যেন হারাতে বসেছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ পৌরশহরের মীরগঞ্জ হাটটি। কোনো পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ক্রেতা শূন্যতায় ভুগবে উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যের ধারক মীরগঞ্জ হাট আর ব্যবসা গুটিয়ে আনতে অনেকটাই বাধ্য হবেন টিকে থাকার চেষ্টা করা সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বন্দর খ্যাত এ হাটটি রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন, গালামাল, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু দুঃখজনক হলো পৌরসভার আয়ের অন্যতম উৎস ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থান হলেও এর নেই দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, দায়সারা পয়ঃনিষ্কাশন, যত্রতত্র আর্বজনার স্তুপ হাটটির ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়েছে।

জানা যায়, পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩টি ইজারা মহালের ৮টিই হলো মীরগঞ্জ হাটের। এ মহালগুলো থেকে প্রাপ্ত আয়ই হলো পৌরসভার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। চলতি ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এ ৮টি ইজারা মহাল থেকে আয় এসেছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকার ওপর। সরকারি ইজারা মূল্যের চেয়ে যা প্রায় ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বেশি। এরমধ্যে গরু হাট মহালের সরকারি ইজারা মূল্য ছিল ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ২৪০ টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য ৫৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। ছাগল হাট মহাল ইজারা মূল্য ছিল ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য ২৮ লাখ টাকা। সরকারি ইজারা মূল্য ও ইজারাকৃত মূল্য একই রয়েছে পাট হাট মহালে, যার পরিমাণ ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪০ টাকা। সাইকেল, রিকশা, ভ্যান হাট মহাল ইজারা মূল্য ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ০৩৭ টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। মাছ, শুটকি মহাল ইজারা মূল্য ছিল ৮৪ হাজার ৪৮২ টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। হাঁস, মুরগী, কবুতর মহাল ছিল ৫৯ হাজার ৮৯০ টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য হলো ১ লাখ টাকা। কাঁচা বাজার, খুচরা বাজার, গোস্ত বাজার, মিষ্টি বাজার মহাল ইজারা মূল্য ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩ টাকা আর ইজারাকৃত মূল্য হলো ১২ লাখ টাকা এবং হাটের দিন ব্যতীত নিয়মিত বাজারের সরকারি ইজারা মূল্য ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৩৮১ টাকা আর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।

মীরগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, ‍‍`সরকারি বরাদ্দ বাদেও ইজারা বাবদ যে টাকা আসে তার অর্ধেকও যদি প্রতিবছর কাজ করা যেত তাহলেও মনে হয় এমন দূর্দশা হতো না। ৫-৬টি সেড থাকলেও তার ওপরে নেই কোনো চালা। বৃষ্টির দিনে পলিথিন টাঙিয়ে দোকান করেন ব্যবসায়ীরা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটুপানি। এই হাটুপানি আর কাদায় লুটোপুটি খেতে হয় হাটুরেদের। এমন অব্যবস্থাপনার জন্য এই বাজার থেকে ধীরে-ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ আর ক্রেতা শূন্যতায় ভুগছি আমরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো বা ব্যবসাগুটিয়ে ফেলতে হবে অনেককেই।‍‍`

মীরগঞ্জ হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রব্বানী, বানেছ ও মসলা ব্যবসায়ী শুধাংশু বর্মন বলেন, ‍‍`হাটুপানি আর কাদা থেকে বাঁচতে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে আমাদের অর্থেই মাটি কেটে দোকান উঁচু করতে হয়। সব হাটের উন্নয়ন হলেও মীরগঞ্জ হাটের কোন উন্নয়ন হয় না। মেয়র এ হাটের উন্নয়নে কোন নজর দেন না।’ দুঃখ প্রকাশ করে জাতীয় শ্রমিক পার্টির উপজেলা সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুজ্জামান মনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় মেয়র ও আমরা মীরগঞ্জ হাটের চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছিলাম। ভোটও দিয়েছিলেন স্থানীরা। আমাদের দুর্ভাগ্য, এখন আর মেয়র সাহেব বাজারটির উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন না।’

মীরগঞ্জ হাটের উন্নয়নের বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুর রশীদ রেজা সরকার ডাবলু বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী মীরগঞ্জ হাটের উন্নয়ন করতে আমরা চেষ্টা করছি। বরাদ্দ না পেলে হাটের উন্নয়ন করা সম্ভব না।’

 

এসএএস

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ