• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভাগ্নের জন্য ‘ভোট চাইলেন’ প্রতিমন্ত্রী!

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ০৩:০৩ এএম

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভাগ্নের জন্য ‘ভোট চাইলেন’ প্রতিমন্ত্রী!

দেশজুড়ে ডেস্ক

জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে সার্কিট হাউসে বসে ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে ভাগ্নের জন্য ‘ভোট চাইলেন’ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি। ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তী যশোর জেলা পরিষদের নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী।

এতে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে দাবি করে শনিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেছেন, ‘এডিবি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেটা নিয়ে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বসেছিলাম। ওখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন।’

সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী। তার আপন মামা স্বপন ভট্টাচার্য্য যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও পল্লী উন্নয়ন-সমবায় প্রতিমন্ত্রী। জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু এই বিধি লঙ্ঘন করে আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে শনিবার বেলা ১১টার দিকে যশোর সার্কিট হাউসে উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে তার (প্রতিমন্ত্রী) আপন ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালান।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, সেখানে নির্বাচনী মিটিং করে ইউপি চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন লোভলালসা দেখিয়ে তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীকে বিজয়ী করতে নিজ নিজ ইউপি সদস্যদের ভোট দেওয়ার আহবান জানান। সার্কিট হাউসে নির্বাচনী প্রচারণার সভার ভিডিও ফুটেজ ও সার্কিট হাউজের সিসি টিভির ফুটেজ তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধির ২০ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। একইসঙ্গে ধর্মীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর মশিয়াহাটিসহ বিভিন্ন দুর্গাপূজায় পরিদর্শনকালে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তিনি তার ভাগ্নে গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করতে নির্দেশনা দেন। প্রতিমন্ত্রীর একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথকে রুদ্ধ করেছে।

এদিকে ভাগ্নের হয়ে যশোর সার্কিট হাউসে মণিরামপুর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে- এমন খবরে সংবাদ কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। তবে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপির পিএস কবির খান গণমাধ্যম কর্মীদের সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে যেতে বাধা দেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কোনো সরকারি প্রোগ্রাম না। এটা প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নিজস্ব প্রোগ্রাম।’ সভাকক্ষের বাইরে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার জলির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারা অবস্থান নেন। তারাও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন।

নির্বাচনী মতবিনিময় সভার একটি ছবি গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে রয়েছে। সেখানে সভাকক্ষের মঞ্চে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা ইউপির চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু, ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বসে থাকতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া সভাকক্ষে মতবিনিময় সভায় উপজেলার আরও ৮ ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা পরিষদের  চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান পিকুল। তিনিও উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। পরে সেখানে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করা হয়।

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার আনিছুর রহমান জানান, সরকারি ডাকবাংলো বা সার্কিট হাউসে নির্বাচনী সভা ও সংসদ সদস্যের (এমপি) অংশগ্রহণ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থি। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেডআই/

আর্কাইভ