প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২, ০৫:৩৬ এএম
মাহফুজ রহমান, জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পুনট ইউনিয়ন পরিষদের চাকলমোয়া-নিমেরপাড়া হতে জগডুম্বর যাওয়ার রাস্তার নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, এইচবিবি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অধীনে কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চাকলমোয়া-নিমেরপাড়া হতে জগডুম্বর যাওয়ার রাস্তা ১ হাজার মিটার সড়কের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ১১০ টাকা। কাজটি করছেন কালাই উপজেলার মেসার্স সাবা চৌধুরীর স্বত্ত্বাধিকারী রানা চৌধুরী। চলতি বছরের গত ১৭ এপ্রিল কাজ শুরু করে, শেষ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২৬ মে। তবে এ মাসের ২৬ সেপ্টেম্বরও শেষ হয়নি ওই রাস্তার কাজ ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই রাস্তায় কাজ প্রায়ই শেষের দিকে। সেখানে ইট সলিংয়ের কাজ করছে রাজমিস্ত্রীরা। নির্মাণাধীন রাস্তা দিয়েই ট্রলি করে ইট নেয়া হচ্ছে রাজমিস্ত্রীদের কাছে। আর ট্রলির লোডে সলিং করা ইট সহজেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। অসংখ্য ভাঙ্গা ইট রাস্তা পাশে ফেলা দেয়ার ফলে গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহারের জন্য ওই এলাকার কয়েকজন মহিলা বস্তায় ভরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন মহিলা বলেন, ‘এসব ভাঙ্গা ইট বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। আজ বিশ বস্তার মতো ইট হয়েছে। কিছুদিন রাস্তার কাজ বন্ধ ছিল। বন্ধের আগে এসব ভাঙ্গা ইট ঠিকাদাররা নিয়ে যেতে দিতো না। এখন আর কিছু বলে না। তাই আমরা নিয়ে যাই।’
নিমেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রাস্তার কাজে যে ইট দেয় হয়েছে, এগুলো সে ইট নয়। এগুরো পড়ে থাকা ইট, এগুলা ভালো না, সব খারাপ ইট। টিউনো (ইউএনও) একদিন আসছিল। আমি টিউনোক বললাম এই ইট দিয়ে কাজ হবে? তিনি কথা বললেন না। আমি স্বয়ং বলেছি তাকে। তিনি কথা বলে চলে গেলেন। এই সত্য কথা কাকে বলবো আর আর কে শুনবে?’
চাকলমোয়া গ্রামের বাসিন্দা নূর নবী বলেন, ‘রাস্তার উপর দিয়ে এখেই গাড়ি গেলে সব ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। এরপর যখন বড় গাড়ি যাবে, লোড নিবে তখন তো রাস্তা থাকবেই না। একটা ইটও থাকবে না।’
নিমেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হৃদয় বলেন, ‘রাস্তাটা এভাবে করা ঠিক না, এক নম্বর ইটের জায়গায় দুইটা কাজ করতে পারতো। তাহলে ও তো কেউ কিছু বলতো না। অন্তত তিন নম্বর দিয়ে কাজ করতো। তাও না, এই ইট তো মেয়াদহীন, একবারে নিম্নমানের। এর নিচে আর ইট হয় না। এটাতো ফেলে দেয়, ভাটায় হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ এরকম ইট পড়ে আছে। এগুলা কেউ টাকা দিয়ে নিবে? নিবে না।’
এ ব্যাপারে ওই কাজের ঠিকাদার মো. রানা চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাজ খারাপ হয়েছে, এটা কখনো বলবো? সিডিউল মোতাবেক কাজ হইছে কিনা এটা দেখবে ইঞ্জিনিয়াররা।’এসব কথা বলেই তিনি রাগান্বিত হয়ে যান।
কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিঃ দাঃ) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘রাস্তার কাজে ঠিকাদার অনিয়ম করছে। এর আগে থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়েছে। গত ৩০ জুনের আগের কাজ। কাজটা কিছুদিন বন্ধ ছিল। ইউএনও স্যারসহ পরিদর্শন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার বলেন, ‘রাস্তাটি পরিদর্শন করে ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পিআইওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এআরআই