প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৭:৩৩ পিএম
ভারতবর্ষের প্রাচীন সমাজ ছিল নারীকেন্দ্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক। সে সময় নারীরাই ছিল পরিবার ও সমাজের প্রধান। দেবী দুর্গার পূজার প্রচলন হয় তখন থেকেই। হিন্দু শাস্ত্রে দুর্গাপূজাকে বলা হয়ে থাকে নারীশক্তির আরাধনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী যেখানে কোমল, ক্ষমতাহীন সেখানে নারীশক্তির অস্তিত্বকে জানান দিতে ও নারীশক্তিকে জাগ্রত করতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার দাস পাড়ায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও নারীদের নেতৃত্বে এবং সম্পূর্ণ নারীদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয়া দুর্গাপূজা।
গত পাঁচ বছর ধরে এই এলাকার ২১ জন নারী নিজেদের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে আয়োজন করেন এই পূজার। একই স্থানে দুর্গাপূজা ছাড়াও কালিপূজা, স্বরস্বতী পূজাসহ অন্যন্যা পূজারও আয়োজন করে থাকেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন নারীদের এই আয়োজন দেখার জন্য। দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূজার সব দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় নারীরা। নারীদের এ আয়োজনে আলাদা নজর থাকে সকলেরই।
আয়োজকরা জানান, পাঁচ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা শহরের দাস পাড়ায় শিবমন্দির মহিলা সংঘ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এলাকার নারীরা। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ২১ জন। শিবমন্দির মহিলা সংঘের ব্যানারে আগের চার বছরের ন্যায় এবারও দুর্গা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ ও রং করার কাজ চলছে। গত চার বছরের মতো এ বছরও তারা সকলের উৎসাহ এবং সহযোগিতা পাচ্ছেন। নারী হওয়া সত্ত্বেও এত বড় আয়োজনে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না এবং খুব ভালোভাবেই তারা তাদের আয়োজন সম্পন্ন করে থাকেন।
শিবমন্দির মহিলা সংঘের সভাপতি মৌসুমি দাস জানান, পাঁচ বছর ধরে নারীদের উদ্যোগে আমরা এই মণ্ডপে পূজার আয়োজন করি। নারীরা মূল আয়োজক ও উদ্যোগক্তা হলেও সকলের সহযোগীতায় আমরা কাজগুলো সম্পূর্ণ করি। কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। ভালোভাবেই আমরা প্রতিবারই আমাদের আয়োজন শেষ করতে পেরেছি।
শিবমন্দির মহিলা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্রী টুম্পা রাণি দাস জানান, অনেক আগে এখানে পূজা অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ১০/১২ বছর বন্ধ থাকে। পাঁচ বছর আগে এলাকার নারীরা উদ্যোগ নেয় কমিটি গঠন করে আমরা নারীরাই পূজার আয়োজন করব। তারপর থেকে সকলের সহযোগীতায় গত পাঁচটি বছর ধরে আমরা কোনো সমস্যা ছাড়াই এই পূজার আয়োজন শেষ করছি। এলাকার তরুণ তরুণীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাজ করে।
পূজা উদযাপন পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি কিশোর কুমার আগরওয়ালা জানান, চুয়াডাঙ্গায় এ বছর ১২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিবমন্দির মহিলা সংঘের আয়োজনটি ব্যতিক্রম। এখানে পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত নারীরা সম্পৃক্ত থাকেন। তাদের আয়োজন থাকে পরিচ্ছন্ন এবং বেশ পরিকল্পিত। তাদের ব্যতিক্রম এই আয়োজন দেখতে দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন।
এএল/