প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ০৮:৪৪ পিএম
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। আর নিখোঁজদের মরদেহের অপেক্ষায় ঘটনার পর থেকেই করতোয়ার পারে অবস্থান করছেন স্বজনেরা।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস এবং ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সেখানে ভিড় করছে নিখোঁজদের স্বজনেরা।
ভাই এবং ভাইপোর খোঁজে আউলিয়া ঘাটে এসেছেন ষাটোর্ধ কৃষ্ণ চন্দ্র রায়। তিনি জানান, নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে তার ভাই নরেশ ও ভাইপো সিন্টু বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি। নৌকাডুবির খবরে কাল থেকেই এখানে মরদেহের অপেক্ষা করছেন তিনি।
নাতির খোঁজে উপজেলার পাঁচপীর এলাকা থেকে এসেছেন বৃদ্ধ সুমল চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘নাতির মরদেহটা পেলে অন্তত নিজেরা সৎকারের কাজটা করতে পারতাম।’
মাড়েয়া বটতলি এলাকার ধীরেন বাবুর দুই প্রতিবেশীসহ ৭ জন নিকটাত্মীয় এখনও নিখোঁজ। কাল থেকে তিনি নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজায় যোগ দিতে আমার ভাতিজা, ভাতিজার বউ, ভাতিজার শ্বশুর, শ্যালিকা এবং আমার ভাতিজি নৌকায় ওঠে দুর্ঘটনায় পড়েন। এখন পর্যন্ত কারও খোঁজ পাইনি। এখন তাদের মরদেহের অপেক্ষা করতেছি।’
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ডুবুরিদল। ভোর থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মোট ৪১টি মরদেহের মধ্যে নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও নারী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।
নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড়শরও বেশি যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় উঠার পরপরই নৌকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন। পরে যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সে পাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই। অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। কিন্তু চরম মুহূর্তের বর্ণনা করতে পারবো না। তবে এতো মানুষ মারা যাবে, তা বুঝতে পারিনি।’
এদিকে, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যাই। গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে।‘