• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

দুই অপহরণকারীকে চিনতে পেরেছেন রহিমা বেগম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ০১:০৭ এএম

দুই অপহরণকারীকে চিনতে পেরেছেন রহিমা বেগম

দেশজুড়ে ডেস্ক

২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হয়েছেন রহিমা বেগম। উদ্ধারের ১৪ ঘণ্টা পর অবশেষে মুখ খুলেছেন তিনি। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তিনি জানিয়েছেন, রাতে নিজ বাসা থেকে পানি নিতে নেমে অপহৃত হন।  তাকে চারজন অপহরণ করেছিল। এরমধ্যে তিনি মহিউদ্দিন ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়াকে চিনতে পেরেছেন। বাকি দুজনকে তিনি চিনতে পারেননি।

রহিমা বেগম দাবি করেন, বাসার নিচ থেকে ৪ জন দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে তাকে অপহরণ করেছিল।

পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, মরিয়ম বেগম জানিয়েছেন, চারজন তাকে অপহরণ করেছিল। এরমধ্যে তিনি মহিউদ্দিন ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়াকে চিনতে পেরেছেন। বাকি দুজনকে তিনি চিনতে পারেননি।

রহিমা বেগমকে অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেয়া হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। জমিজমার বিরোধ থাকায় কিবরিয়া ও মহিউদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন ও বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দিয়েছে। তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর মনি নামে এক মহিলার কাছ থেকে তিনি এক হাজার টাকা নিয়েছেন।

পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার দুপুরে তাকে মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হবে।

এদিন বেলা ১১টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে রহিমা বেগমকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা রহিমা বেগমকে সুস্থভাবে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছি। আল্লাহর রহমতে তিনি ভালো আছেন। আমরা তাকে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এরপর তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবো। তারপর অধিকতর তদন্ত শেষে বলতে পারবো তিনি কী স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিলেন, না এর সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরা জড়িত! অথবা এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা।

একই দিন দুপুর ১টার কিছু আগে পিবিআই কার্যালয়ে আসেন মরিয়ম মান্নানসহ তারা তিন বোন। তিনি তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের বলেন, আমার মাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি এটাই বড় কথা। দুপুর দেড়টার দিকে মা রহিমা বেগমকে দেখতে যান মেয়ে মরিয়াম মান্নানসহ তার অন্য সন্তানরা। এ সময় তারা মা রহিমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

পরে মরিয়ম মান্নান বলেন, মাকে উদ্ধার করেছে পিবিআই ও দৌলতপুর থানা পুলিশ। এটা আমাদের কাছে খুবই খুশির খবর। এ সময় তিনি তার মা রহিমা বেগমকে আত্মগোপনে যেতে সহযোগিতা করার কথা অস্বীকার করেন।

পরিবারের দাবি, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম (৫২)। একঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেন না। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সাথে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা রয়েছে।

জেডআই/

আর্কাইভ