প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ০২:৪৮ এএম
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তার দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে মর্মে কেন তিনি সঠিক দায়িত্ব পালন করেননি তার উপযুক্ত জবাব চেয়ে এই নোটিশ দেয়া হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর তাকে এই সংক্রান্ত চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষার দিন এবং ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষার দিন ৬টি বিষয়ের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট গোপনে নিয়ে তার কোচিংয়ের শিক্ষক যোবায়ের, সোহেল, হামিদুল ও রাসেলকে দিয়ে হাতে লিখে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করতেন।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন অফিস কক্ষ রেখে ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রশ্নপত্র খোলা হয়েছে সেদিন। বিষয়টি জেনেও চেপে যান ইউএনও। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেছেন, ওইদিন কেন্দ্রে গিয়ে একটি প্রশ্ন দোতলায় দেখেছি। তাদের বলা হয়েছে এরপর থেকে যেন অফিসে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলেন তারা। এরপর কল কেটে দেন তিনি।
অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ভূরুঙ্গামারী থানায় মামলা দায়ের করেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরী। মামলায় নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকসহ এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায় ভুরুঙ্গামারী থানা পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন- ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, ইংরেজি শিক্ষক রাসেল মিয়া, ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক যোবায়ের হোসেন, কৃষি বিষয়ের শিক্ষক হামিদুর রহমান, বাংলা বিষয়ের শিক্ষক সোহেল আল মামুন এবং স্কুলের পিয়ন সুজন।
একই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হলে শুক্রবার তিনি যোগদান করেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঘটনার তদন্ত করেছেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ফারাজ উদ্দিন তালুকদারকে প্রধান এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উমা) প্রফেসর মো. হারুন অর রশিদ মণ্ডল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আক্তারুজ্জমানকে সদস্য করে করা তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্ত করেন। এ সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম বলেন, ডিজির নির্দেশে গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকা শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করলাম। প্রতিবেদন দেয়া হবে। তার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হিসেবে ইউএনও এর দায়িত্ব ছিল সর্বেসর্বা। তিনি উপজেলার ছয়টি পরীক্ষা কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করেন। থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্র সর্টিং এর সময় ইউএনও এর উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু তিনি নিজে না থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর একদিনে ছয়টি কেন্দ্রের কয়েক হাজার প্রশ্নপত্র সচিবদের নিয়ে সার্টিং করার সময় প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেন কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান। তিনি একাই ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাসেঁর উদ্দেশ্যে নিজের কাছে নেন। ওই সচিবকে আটকের পর স্কুলের আলমিরায় থাকা তার ব্যাগ থেকে বেশ কিছু প্রশ্নপত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে কথা বলতে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলা ছিল। এ কারণে ইউএনওকে গত ২০ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানো চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে।
এআরআই