প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ০৬:০১ পিএম
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সনদপ্রাপ্ত অধিকাংশ সদস্যদের বাদ দিয়ে গোপনে আনসার ও ভিডিপি ক্লাবের পরিচালনা কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ কমিটি বাতিল করে প্রকৃত সনদপ্রাপ্ত সদস্যদের নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন আনসার ও ভিডিপির স্থানীয় সদস্যরা।
জানা যায়, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জ আনসার ও ভিডিপি ক্লাবটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো পরিচালনা কমিটি না থাকায় কয়েকজন সনদপ্রাপ্ত সদস্য উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত উপজেলা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) শেফালী বেগমের সঙ্গে দেখা করে কমিটি গঠনের জন্য যোগাযোগ করেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী স্থানীয় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের উদ্যোগে ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ক্লাবটির পরিচালনা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং রেজুলেশনের কপি ও কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা ওই কর্মকর্তার নিকট জমা দেন কামরুজ্জামান, ফুল মিয়াসহ আরও কয়েকজন সদস্য।
এরপর তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করলে তিনি করোনাকালে কমিটি গঠন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ওই কমান্ডার অবসরে যাওয়ার পর নতুন যোগদানকৃত উপজেলা কমান্ডার গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি সাড়া দেননি বলে অভিযোগ ওই সদস্যদের।
এদিকে, গত ৫ সেপ্টেম্বর পূর্বে জমাদানকৃত কমিটি গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে তাদের অজান্তেই ওই কমান্ডার ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্য আরেকটি কমিটির অনুমোদনের জন্য গাইবান্ধা জেলা কমান্ড্যান্টের নিকট আবেদন করেন। এতে বলা হয় আনসার ও ভিডিপি ক্লাবটি দীর্ঘদিন যাবৎ জমি দাতা আফতাব হোসেনের ভোগদখলে ছিল।
ক্লাবের সনদধারী আনসার ও ভিডিপির সিনিয়র সদস্য কামরুজ্জামান, আব্দুর রহমান, মোত্তালেব হোসেন, গোলাম মোস্তফা, সমস্তভান, সুরুজা, আমিনাসহ আরও কয়েকজন জানান, ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল তৎকালীন ইউনিয়ন কমান্ডার আফতাব উদ্দিন ক্লাবটির উন্নয়ন কল্পে মহাপরিচালকের নামে ১৩ শতাংশ জমি দান করেন। বিষয়টি নজরে আসলে তৎকালীন মহাপরিচালক খলিলুর রহমান চৌধুরী, জেলা কমান্ড্যান্ট হাসিবুর রহমান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা কমান্ডার ক্লাবটি উদ্বোধনের জন্য আসেন।
ওই সময় উপার্জনের কোনো পথ না থাকায় জমিদাতা আফতাব উদ্দিনকে দানকৃত ওই জমির দক্ষিণ পাশে ছোট্ট একটি টি স্টল করার অনুমতি দেন মহাপরিচালক। যা বৃদ্ধ আফতাবের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিছু গাছও লাগিয়েছিলেন তিনি। সেগুলো বেশ বড় হয়েছে এখন। ওই টি স্টলটি ছাড়া বাকি জায়গাজুড়েই রয়েছে ওই ক্লাবের স্থাপনা ও গাছপালা।
আনসার ও ভিডিপি ক্লাবের নিষ্ক্রিয় সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, `৯২ সালে বার্ষিক ২০ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে আফতাবকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেন নাই। কিছুদিন আগে কাউকে না জানিয়ে সমিতির ব্যাংক একাউন্ট থেকে আমি কিছু টাকা তুলেছি। পরে বিষয়টি উপজেলা কমান্ডার জানতে পেরে তা আবার ব্যাংকে জমা করেছি। এ নিয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ রইলো।`
কয়েকজন সদস্য বলেন, `আফতাব কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করেননি। এটা ডাহা মিথ্যে কথা। এর আগে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবেক কমান্ডার শেফালির নিকট জমা দিয়েছিলাম আমরা। তিনি অবসরে যাওয়ার পর নতুন যোগদানকৃত উপজেলা কমান্ডার গোলাম রব্বানীর নিকট গেলে তিনি কমিটি গঠনের জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে কিছু শর্ত নিজ হাতে লিখে তাতে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে জমা নেন। এখন শুনছি আমাদের কমিটি না করে ও সনদধারী আনসারদের বাদ দিয়েই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তা বাতিলের দাবিও করেছেন তারা।`
ঋণ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কেঁদে কেঁদে আফতাব হোসেন বলেন, `ঋণ নিয়েছিলাম কি না তা সদস্যরাই বলবেন। আর গাছগুলো আমি সন্তানের মতো যত্ন করে বড় করেছি। চায়ের দোকানটি করার অনুমতি দিয়েছিলেন ওই সময়ের মহাপরিচালক খলিলুর রহমান চৌধুরী স্যার। বিষয়টি সবাই জানে। এ ষড়যন্ত্র নতুন নয়।`
ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সাবেক উপজেলা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) শেফালী বেগম বলেন, `প্রকৃত সনদধারীদের নিয়ে কমিটি গঠনের জন্য কাগজপত্র ও স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প জমা নেয়া হয়েছে।`
কমিটি গঠনের কাগজপত্র ও স্ট্যাম্প জমা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা কমান্ডার গোলাম রব্বানী বলেন, `কোনো কাগজপত্র তারা জমা দেয়নি এবং স্ট্যাম্পও নেয়া হয়নি। তবে ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম আমাকে না জানিয়ে সোনালী ব্যাংকের হিসাব নাম্বার থেকে ইতিপূর্বে ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছিলেন। আমি জানার পরে তা আবার জমা করিয়েছি।`
কমিটি হলেও তা পরিবর্তন করা যাবে না বিষয়টি এমন নয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, `পূজা বের হলে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সকল আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই একটি কমিটি গঠন করা হবে।`
এ বিষয়ে জেলা কমান্ড্যান্ট রেজাউল ইসলাম বলেন, `একটি আবেদন এসেছিল এবং তা অনুমোদনও দিয়েছি। তবে যেহেতু ঘটনাটি জানলাম, সে ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।`
এএল/