প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:০৯ পিএম
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের ভাই মো. হোসেন আলীর (৪৫) বিরুদ্ধে দেশীয় জাতের তিনটি গরু চুরির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রাতের আধাঁরেই রফাদফা করেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
হোসেন আলী ওই ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের আপন চাচাতো ভাই।
জানা যায়, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের পাইটকাপাড়া গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিন খলিফার ছেলে গাজী রহমানের (৫৫) গোয়াল ঘর থেকে গত মঙ্গলবার রাতে দেশী জাতের তিনটি গরু চুরি হয়। দিনভর খোঁজাখুঁজি পর গরু তিনটির সন্ধান মেলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের জ্যাঠাতো ভাই হোসেন আলীর গোয়াল ঘরে। পরে প্রভাবশালী ওই ইউপি চেয়ারম্যানের দারস্থ হন গরুর মালিক। চোরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পরের রাতে গরু মালিককে তাদের গরু ৩টি ফেরত দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ওই এলাকায় ইতোপূর্বে যাদের গরু হারিয়েছে। তাদের ধারণা হোসেন আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পূর্বের চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গরু চুরির ঘটনা এটি প্রথম নয় তাদের এলাকায়। এর আগেও বেশ কয়েকবার গরু চুরি হয়েছে। অভিযোগও দেয়া আছে থানায়। চোরাই গরু উদ্ধার তো দুরের কথা আসামিই শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এবারের চোর চেয়ারম্যানের ভাই হওয়ায় কোন বিচার হলোনা। চেয়ারম্যান তার ভাইয়ের পক্ষে অবস্থান নেয়।
গরুর মালিক গাজী রহমানের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী (৪৮) বলেন, ‘আমার ভাইয়ের তিনটি গরু চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। গরু চুরির পর আমরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করি। একদিন পর জানতে পারি চেয়ারম্যানের ভাই হোসেন আলী গরু ৩টি চুরি করেছেন। তখন এলাকার কয়েকজনসহ চেয়ারম্যানের দারস্থ হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমি দেখতেছি। পরে রাতে আমাদের ডেকে গরু তিনটি ফেরত দিয়ে দেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আপনারা বাড়িতে চলে যান। আমার ভাই যেহেতু চোর, তাই মনে করেন বিষয়টি আমার। পরে আমরা গরু ৩টি নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।’
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নগর কাঠগড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান মতি (৬২) বলেন, ‘প্রায় মাস দুয়েক আগে আমার তিনটি ফ্রিজিয়ান গরু চুরি হয়। প্রত্যেক গরু দৈনিক ১৫/২০ কেজি করে দুধ দিতো। যার আনুমানিক দাম প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। থানায় অভিযোগও দিয়েছি। কেনো কাজ হয়নি। আমার গরু চুরির ঘটনায় হোসেন আলীর হাত থাকতে পারে। এই চুরির ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাকি চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেত। কিন্ত চেয়ারম্যান সেটি করতে দিলো না।’
একই ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের নিতেন চন্দ্র (৬০) বলেন, ‘আমার বড় দাদা বীরেনের ৭টি গরু হারায়। অনেক খোঁজাখুজি করে পাইনি। পরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। কোনো কাজ হয়নি। এ চুরির সাথে আমাদের চুরির সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সেটি প্রমাণ করা হলো না। এজন্যেই চুরি কমবে না বরং চুরি আরও বাড়বে।’
এ বিষয়ে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শমেস উদ্দিন বাবু বলেন, ‘চেয়ারম্যান চুরির সাথে জড়িত আছেন কি না সে বিষয়ে আমি ক্লিয়ার না। তবে তার ভাইকে এ ভাবে রক্ষা করাটা তিনি ঠিক করেননি। কারণ তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। সবাইকে সমান চোখে দেখা দরকার ছিলো বলে আমি মনে করি। গরু চোরের বিচার যদি শক্ত হতো তাহলে আগের চুরি যাওয়া গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যেতো।’
তবে এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, ‘বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ দিতে বলেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এআরআই