প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ০৮:৫৬ এএম
ঝিনাইদহসহ চার জেলার দায়িত্বে থাকা মৎস্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজ দেয়ার নাম করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পুকুর খনন বাবদ অনেক এক্সকেভেটর (ভেকু) মালিক তার কাছে টাকা পান।
ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য বিভাগ তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গত দুই বছর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি। এদিকে টাকা অদায়ে ব্যর্থ হয়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের একাধিক মামলা করেছেন ঠিকাদাররা।
ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের দায়িত্ব ছিল ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় স্কিম করা ও গৃহীত প্রকল্পসমূহ তদারকি করা। কিন্তু তিনি তার সরকারি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বেপরোয়াভাবে ঠিকাদারি কাজে জড়িয়ে পড়েন। পুকুর খননের প্রকল্পগুলো ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়ে তিনিই করে গেছেন। মৎস্য সেক্টরে তার এই একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য দেখে চার জেলার ঠিকাদাররা কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন কাজ পাইয়ে দেবার জন্য। শেষ মুুহূর্তে তিনি এই টাকা পকেটস্থ করে নাটোর জেলায় বদলি হয়েছেন। ঝিনাইদহ ছাড়াও তিনি কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কুষ্টিয়ায় তার অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে একাধিক পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে খবর প্রচারিত হলেও বদলি ছাড়া তার কোনো শাস্তি হয়নি।
ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট পাওনা টাকা ফেরত পাবার জন্য আবেদন করেন। সদর উপজেলার কাজলী বিল খননের প্রকল্প করে দেয়ার নাম করে কবির হোসেনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সেই টাকা এখনও দেননি বলে কবির হোসেন স্বীকার করেন।
এদিকে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য দফতরের সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প পরিচালক ও মহাপরিচালকের কাছে লিখিত চিঠি দেয়া হয়। ঠিকাদার ও এক্সকেভেটর (ভেকু) মালিকদের অভিযোগ শুনতে শুনতে নাকাল ঝিনাইদহ জেলা মৎস্য অফিস ২০২২ সালের ৯ মার্চ উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদকে এই জেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদানের জন্য মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
হরিণাকুন্ডুর ইমারত হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদের কাছে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তিনি এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি টাকার জন্য মাসের পর মাস ঘুরছেন।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার আব্দুল গনি জানান, তিনি ৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু কাজও পাননি আবার টাকাও ফেরত পাননি। ফলে টাকা উদ্ধার করতে না পেরে আদালতে দুইটি চেকের মামলা করেছেন, যার নং ১২৮/২২ ও ১৩৩/২২।
ঝিনাইদহ শহরের লিমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আশরাফুল আলম মফিজ জানান, তিনিও ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার আশায় ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। সোহেল আহম্মেদ তাকে রুপালী ব্যাংকের দুইটি চেক দিয়েছিলেন, কিন্তু টাকা তুলতে পারেননি। তিনি চেক ডিজঅনারের মামলা করবেন।
জানা গেছে, শৈলকূপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকার তালহা এন্টারপ্রাইজের মালিকসহ ঝিনাইদহের এক সংসদ সদস্যের ভাতিজাও সোহেল আহম্মেদের কাছে টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন। এ ছাড়া অনেক ভেকু মালিক টাকার জন্য সোহেল আহম্মেদের পেছনে ঘুরছেন।
ঠিকাদারদের একটি সূত্র জানায়, ঝিনাইদহসহ চার জেলা থেকে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদ। সৎস্য বিভাগের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সোহেল আহম্মেদ বেপরোয়াভাবে অপকর্ম চালিয়ে গেলেও তার শাস্তিস্বরূপ চার জেলার দায়িত্ব থেকে নাটোর জেলায় বদলি করা হয়েছে। শাস্তির পরিবর্তে সাধারণ এই বদলির ঘটনায় মৎস্য সেক্টরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ধুমায়িত হচ্ছে।
ঝিনাইদহের সাবেক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও বর্তমান যশোরের বিল বাওড় প্রকল্পের পরিচালক আলফাজ উদ্দীন শেখ বলেন, ‘সোহেলের বিষয়ে একাধিক চিঠি সে সময় মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হলেও তড়িৎ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে কিছুদিন আগে তাকে নাটোর জেলায় বদলি করা হয়েছে বলে শুনেছি।’
ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেকের টাকা ফেরত দিয়েছি। যারা চেক ডিজঅনারের মামলা করেছেন তাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আমি সময় নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু আমার কিছুই হয়নি, ডিপার্টমেন্ট আমার পক্ষে আছে।’
জেইউ