প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২, ০৮:৪১ এএম
এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে পরীক্ষা শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ৯ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘটেছে এমন ঘটনা।
৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জনের খাতায় রোল নম্বর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া তখনও কিছুই লেখা হয়নি, তারপরও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি দুই পরীক্ষার্থীর একজন দুটি উত্তর এবং অপরজন তিনটি উত্তরের বৃত্ত ভরাট করেছে কেবল, এমন সময়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এ ঘটনায় এলাকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল তাদের কারও কোনো অনুরোধ না শুনে একতরফাভাবে পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন।
তারা বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে কেন্দ্রে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান। তারপর তিনি কক্ষ পরিদর্শন শুরু করেন। এরপরই ঠুনকো অভিযোগে একের পর এক ৯ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন। পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এরকম ঘটনায় কেন্দ্রের বাহিরে অপেক্ষায় থাকা অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমানের পা ধরেও রেহাই পায়নি পরীক্ষার্থীরা। এ নিয়ে কেন্দ্রের বাহিরে শুরু হয় নানান ধরনের সমালোচনা।
বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থী ও মধ্য হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোকসেদুল বলেন, ‘আমি সকালে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে তারাহুড়ো করে শেষ সময়ে হলে ডুকছি, খাতা পাওয়ার পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক হয়ে সবকিছু ঠিক করে বসতে যাবো, তখনই এসে আমাকে এক্সপেল্ড করে।’
বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থী মোসা. ইমা আক্তার বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে দেখে ভয়ে আমার হাত কাঁপতে কাঁপতে কলমটা পরে যায়। কলম তুলতে নিচু হলেই তিনি আমার খাতা নিয়ে যায় এবং হেড স্যারের রুমে বসিয়ে রাখে।’
অভিভাবক রহিম মিয়া ও রফিক সর্দার বলেন, ‘আমরা এখন ছেলে মেয়েদের পাহারা দিয়ে রাখছি, তারা অনেক কান্নাকাটি করছে। যখন তখন আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়াও সব সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মনমানসিকতা খারাপ হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে ওই কেন্দ্রের হল সুপার ও খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান মনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়। ৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন এমসিকিউ উত্তরের উত্তরপত্রের দুটি ঘর পূরণ করে এবং অপরজন তিনটি উত্তর ভরাট করে। বাকি ৭ জন শুধু রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘর পূরণ করেছে। আমি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু স্যার আমার কথা রাখলেন না। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বহিষ্কারাদেশ লিখেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই দেখাদেখি করছিল এবং প্রশ্ন এক্সচেঞ্জ করছিল।’
অনেকের খাতায় কিছু লেখা নেই এবং পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যেই কেন বহিষ্কার। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা খাতায় লিখেছে এবং সময় অরেকটু বেশি হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’
জেইউ/এএল