প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ০৭:৪৫ পিএম
‘আজ থাকি মোর কষ্টের দিন শ্যাস। এমপি শামীম স্যার মোক নয়া এখান ইসকে দিছে। সেই ইসকেত চড়ি টিপ দিলেই দৌড় মাইরবে। ঠ্যাং দিয়া আর চলা নাইগবের নয়। মুই এখন আরামে বসিয়ে ইসকে চলাইম। খুব ভালো নাইকছে। আল্লাহ হামার এমপির ভালো করুক।’ এভাবেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ভূমিহীন কলিম মিয়া (৫৫)।
জানা যায়, কলিম মিয়ার বাবার কোনো জমি না থাকায় তিনি জন্মেছেন অন্যের ভিটায়। ভূমিহীন বাবা ইব্রাহিম পাগলার মৃত্যুর পর সেই ঠাঁইও হারিয়ে ফেলেন তিনি। বৃদ্ধ মা কলিমন পাগলিকে নিয়ে রাস্তার ধারে খুপড়ি করে বসবাস শুরু করেন। খুঁজতে থাকেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাবা-মা দু’জনেই ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। এরই মধ্যে বিয়ে করেন কলিম পাগলা। স্ত্রী শরিতন বেগমের কোলজুড়ে আসে দুই সন্তান। সন্তান জন্মের খুশি মনে থাকলেও তা নিমিষেই মলিন হয়ে যায়। সড়কের ধারে ঠাঁই নেয়া শেষ সম্বল টুকুও হারিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে মা কলিম পাগলিও মারা যান। একা হয়ে পড়েন মো. কলিম উদ্দিন পাগলা। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ছুটে যান দহবন্দ ইউনিয়নের বামনজল গ্রামে দিনমজুর শ্বশুর মৃত আকবর আলীর বাড়ি। এখান থেকে ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়ে মোছা. কল্পনা আক্তারের সংসার বেশিদিন টেকাতে পারেননি। এখন সে গামেন্টস কর্মী। ছেলে অন্যের টি স্টলে কাজ করেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কলিম উদ্দিন পাগলা এখন অনেক ক্লান্ত। দীর্ঘ সময় কেটে গেছে তার পেডেল চালিত ভাড়ায় রিকশায়। অনেক স্বপ্ন ছিল নিজের একটা রিকশা হবে, কিন্তু সুখের আশায় শরীর পুড়েছে নুন আর ভাতে। তবে সেই স্বপ্ন এখন পূরণ হয়েছে কলিমের।
জীবনের শেষ সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির অতিরিক্তি মহাসচিব (রংপুর) ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাকে একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা উপহার দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে নতুন রিকশা হাতে পেয়ে কলিমের চোখের কোণে জল বেয়ে পড়ে। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তার নিজের রিকশা হয়েছে।
গামছায় মুখ মুছে কলিম মিয়া আরও বলেন, `হামার এমপি স্যার খুব ভালো মানুষ। স্যার হামারগুলেক নিয়ে দিন-আইত খালি চিন্তে করে। এমপি স্যার অনেক উন্নয়ন কচ্ছে। এইদেন মানষোক হামরা বারে বারে এমপি বানামো।`
শুধু কলিমই নয় তার মতো একই গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে মো. হাফিজার মিয়াকেও (৪৭) একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দেন স্থানীয় সাংসদ। নতুন রিকশা পেয়ে তিনিও বলেন, `কষ্টের দিন শ্যাষ হামার। এখন থাকি আর চিন্তা নাই। ইসক্যাত বসি থাকি কামাই কইরমো। গাও গাইমব্যার নয় শরিলও হাফসিব্যার নয়। সারাদিন কামাই আর কামাই কইরমো। কি আনন্দ। আল্লাহ স্যারোক অনেক বড় করুক।`
ভূমিহীন হাফিজার রহমানও তার শ্বশুড় বাড়িতে থাকেন। তার সংসারে ১ ছেলে, ৩ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘দুজনেই রিকশা চালক। প্যাডেল চালিত তাদের রিকশা দুটো জড়াজীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাদের কোনো অটোমেশন ছিল না। শারীরিক কারণেও তারা রিকশা টানতে পারছিলেন না। সে কারণে ব্যক্তিগত অর্থায়নে তাদেরকে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়েছি। যেন তাদের আয় ও সংস্থান বাড়ে। সেই সঙ্গে বার্ধক্যজনিত কারণে তারা যেন পেশা না ছাড়েন।`