• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বাবার পিটুনি খেয়ে উধাও, বাড়িতে ফিরলেন ৪৭ বছর পর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২, ০৭:৫৭ এএম

বাবার পিটুনি খেয়ে উধাও, বাড়িতে ফিরলেন ৪৭ বছর পর

সুদীপ্ত শামীম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

যুবক বয়সে বাবার হাতে পিটুনি খেয়ে স্ত্রী-সন্তান রেখে বাড়ি ছাড়েন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। স্বজনরা অনেক তালাশ করেছেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান মেলেনি। কুদ্দুস মুন্সী গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামের মৃত খোকা মুন্সীর ছেলে।

স্বজনদের ধারণা ছিল, মৃত্যু হয়েছে কুদ্দুস মুন্সীর। তারা জানতেও পারেননি, তিনি অভিমানে বাড়ি না ফিরে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরে। আর এভাবেই কেটে গেছে একে একে ৪৭ বছর।

সম্প্রতি দিনাজপুরের রানীগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে প্রতিবেশী হারুন মিয়ার সঙ্গে দেখা হয় কুদ্দস মুন্সীর। পরে পরিচয় নিশ্চিতের পর পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে তোলেন।

যার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন স্বজনরা, তাকে হঠাৎ ফিরে পেয়ে কেঁদে ওঠেন তারা। তাকে জড়িয়ে ধরে ছেলেও আনন্দাশ্রু ঝরান। খবর পেয়ে তাকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। বাদ যাননি দূরের স্বজনরাও।

এ নিয়ে কুদ্দুস মুন্সীর নাতী নাইম মিয়া জানান, দেশ স্বাধীনের কিছুদিন পর ২৩ বছর বয়সী যুবক কুদ্দুস মুন্সী পাশ্ববর্তী গ্রামের রোকেয়া নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। দেড় বছরের মাথায় তাদের কোলজুড়ে আবদুল করিম নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

সে সময় প্রতিবেশীর ছাগল বেঁধে রাখার অপরাধে কুদ্দুস মুন্সীকে পিটুনি দেয় তার বাবা। এরপর অভিমানে বাড়ি ছাড়েন তিনি। চলে যান দিনাজপুর জেলার রানীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। সেখানে অপরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন কলকারখানাসহ বিভিন্নভাবে জীবনযাপন করছিলেন তিনি। কিছুদিন পর সেখানে বসতি গড়ে আরেকটা বিয়ে করে দিনাতিপাত করে আসছিলেন কুদ্দুস মুন্সী। সেখানে তার দুটি সন্তানও রয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে হাজিরহাট গ্রামের প্রতিবেশী হারুন মিয়া দিনাজপুরের রানীগঞ্জের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে দেখা হয় কুদ্দুস মুন্সীর সঙ্গে। এ সময় হারুনকে চিনে ফেলেন কুদ্দুস। পরিচয় জানাজানির ভয়ে রংপুরের পীরগঞ্জের কুমেতপুর এলাকায় অবস্থান নেয় কুদ্দুস মুন্সী। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে কুদ্দুসের অভিমান ভাঙিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন।

নাইম মিয়া বলেন, ‘জন্মের পর দাদাকে দেখিনি। শুনছি-দাদা হারাইছে। এখন দাদাকে কাছে পেয়ে ভালো লাগছে।’

কুদ্দুস মুন্সীর ছেলে আবদুল করিম মিয়া বলেন, ‘আব্বাকে জন্মের পর দেখিনি। মা বলতো, তোর বাপ হারাইছে। দেখিস একদিন ফির বাড়ি আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আব্বা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর মা আর বিয়ে করেনি। আমাকে অনেক কষ্টে লালন-পালন করেছেন। মা নিজেই জমিতে ধান চাষ করেছেন, গরু পালছে। এভাবেই সংসারটা টিকে রাখছে মা।'

কুদ্দুস মুন্সী বলেন, ‘একটা ছাগল ধানের জমিতে ধান খায়। সে জন্য ছাগলটা ধরি আনি গাছের সঙ্গে বাঁধি রাখছিনু। এ জন্যে আব্বায় লাঠি দিয়ে মারে। পরে গোসা করি বাড়ি ছাড়নু। প্রতিজ্ঞে করনু, আর বাড়িত যাবার নম। এই প্রতিজ্ঞে পালন করবের যায়া, আর বাড়িত যাওয়া হয় নাই। কষ্ট হচে সব ছাড়ি থাকা। তাও আছনু, খালি প্রতিজ্ঞ্যের জন্যে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বয়সে এখন আর গোসা করি কি হবি। তাই বাড়িত আসনো। এখন দুই বউ ছোলপোল নিয়ে থাকমো।’

গাইবান্ধা নাকি দিনাজপুরে থাকবেন জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন দুটে ঘর, দুটে সংসার। যতদিন বাঁচি আছি-হেটেও থাকমো, হোটেও থাকমো।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বলেন, ‘বাবা মারধর করায় কুদ্দুস মুন্সী অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ৪৭ পর তার পরিচয় পাওয়া গেছে। তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম তার স্বামীকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন।’

জেইউ/এএল

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ