রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার ক্যানেলটারী মহল্লায় মুজিববর্ষে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় উপকারভোগীরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। সামান্য বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, হারাগাছ পৌর এলাকার মায়া বাজার ক্যানেলটারী এলাকায় ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মায়া গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদ ৫৬ শতাংশ জমি আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে সরকারকে দান করে। সেই জমিতে উপজেলা প্রশাসন ২২ জন উপকারভোগীর প্রত্যেককে দুই শতাংশ জমি ও পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়।
তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপহারের ঘরগুলো এমন নিচু জায়গায় করা নিয়ে স্থানীয়রা শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, জায়গাটি উঁচু না করে ঘর তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টির পানিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে ক্যানেলটারী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘরের মধ্যে সাতটি ঘরের ভেতর ও বাইরের দিকে প্রায় তিন ফুট পানি উঠেছে। সেখানকার উপকারভোগীরা ঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য ঘরগুলোতে পানি ঢুকে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন, ‘অল্প বৃষ্টিতে পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, যাতায়াতের রাস্তা, টিউবওয়েল, বাথরুম পানিতে ডুবে আছে। এই অবস্থা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চাই।’
সাবানা নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের ঘর-বাড়ি নেই। তাই মায়ার ছেলেরা সরকারকে জমি দান করেছে সেই জমিতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিছে। অল্প বৃষ্টিতে আমাদের ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। পানিবন্দী হয়ে আছি। সাপ বা বিভিন্ন পোকামাকড় আক্রমণের শঙ্কা রয়েছে।’
পারভীন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘরগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে। খুব নিচু জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি।’
হারাগাছ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরফুল ইসলাম সরা বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো অবৈধভাবে দখল হওয়ার কারণেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীসহ পুরো ক্যানেলটারী এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন বলেন, ‘পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া যেগুলো ড্রেন রয়েছে তা ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান জানান, রংপুরে এখন মৌসুমি হাওয়া বেশ সক্রিয়। গত মঙ্গলবার রাতে ১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সোম ও রোববার-এই দুই দিনে ২২৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
জেইউ