
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২২, ০৯:০৬ এএম
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের ডিন ও প্রক্টর ড রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিং, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্যাম্পাসের বাহিরে অনুমতি ছাড়া নেওয়াসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রায় তিন বছর পার হতে চললেও মেলেনি কোন তদন্ত রিপোর্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পাশ কোর্সের সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ মিল্টন শেখ তার খাতা পুনঃমূল্যায়নের আবেদন ও ড রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে নাম্বার টেম্পারিংসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে যথার্থ মূল্যায়ন ও অভিযোগ নিরসনের জন্য তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ এর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিতে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ড. মোঃ বশির উদ্দিনকে সভাপতি, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলামকে সদস্য সচিব, গণিত বিভাগের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোঃ এমদাদুল হককে সদস্য করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
ওই ছাত্রের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ এর স্বাক্ষরিত অন্য একটি নোটিশে ড রাজিউর রহমানকে বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করা হয়।
উক্ত নোটিশে ড রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আরও উল্লেখ করা হয়, আপনি অনার্স কোর্সেও শিক্ষার্থীদের কোটারী করে অনৈতিক শিক্ষা দিয়ে নষ্ট করে যাচ্ছেন এবং অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ অনৈতিক এমন কোন কাজ নাই যা আপনি করেন নাই।
মিল্টন শেখ তার অভিযোগ পত্রে জানান, তিনি বশেমুরবিপ্রবি ল’ পাস কোর্স ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। উক্ত শিক্ষাবর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সে সহ অনেকেই নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থেকে ভালো পড়াশোনা করেও কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। যে সকল শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ১ম, ২য়, এবং ৩য় হয়েছে বা ১ম শ্রেণী প্রাপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ক্লাস না করে কিছু অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ভাল ফলাফল অর্জন করেছে এবং উপস্থিতি ও ভাইভা’তে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হয়েছে।
অভিযোগপত্রে তিনি আরও জানান, কথিত আছে তৎকালীন ল’ বিভাগের শিক্ষক রাজিউর রহমান, মুনসুরা খানম সহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে উক্ত শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক থাকায় পরীক্ষার সময় কিছু অনৈতিক সুযোগ সুবিধা লেনদেন হয়েছে।
এছাড়াও উক্ত নোটিশে নিজের শিক্ষকের ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে মার্ক বাড়িয়ে প্রথম স্থান পাইয়ে দেয়ার অভিযোগও করা হয় তার বিরুদ্ধে।
মিল্টন শেখ জানান, ৪ বছর আগে বিষয়টির সুরাহা হলে আমারই উপকার হত। সঙ্গে সঙ্গে যখন বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম তখন যদি এটা একটিভ থাকতো, আমার হয়তো পরীক্ষা দেওয়া লাগতো না। আমি ঐবার অ্যাডভোকেসি পরীক্ষা দিতে পারতাম বার কাউন্সিলে। কিন্তু বিষয়টি কোনটাই আমি পাই নাই। সর্বশেষ তারা আমার কাছে মাফ চেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার তো যা লস হবার হয়েই গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐ সময় অনেকে অনেক কিছু করতে চেয়েছে কিন্ত কিছুই করতে পারে নাই। শুধু শুধু আগাছা নাড়ানাড়ি হবে। আমি রাজিউর সম্পর্কে জানি তখন অনেকে অনেক কিছু করতে চেয়েছে কিন্ত যখন সেসময় কিছু করতে পারে নাই, এখনতো উনার কেউ কিছু করতে পারবে না।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে সভাপতি ড মোঃ বশির উদ্দিন বলেন, আন্দোলন ও নতুন প্রশাসনের কারণে এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। আর যেহেতু নতুন প্রশাসন আদৌ কিভাবে নিবে সে বিষয়ে ভেবে কোন কথা বলিনি এবং বর্তমান প্রশাসনের চাপের মুখে এই কমিটির অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্য-সচিব মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, সেসময় ভিসি আন্দোলনের যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টালমাটাল অবস্থা। কোনকিছুই সঠিকভাবে হচ্ছিলো না। তারপর নতুন প্রশাসন আসলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ। এসব কারণে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ড মোঃ রাজিউর রহমান বলেন, এগুলো জানা নেই আমার। আমি দেখি নাই কখনো। এ বিষয়ে আমি কিংবা কেউ অবগত না। বিশ্ববিদ্যালয়ও অবগত না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুরাদ হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ বিষয়ে কোন তদন্ত রিপোর্ট আসেনি।
এইচএ