• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মেজর ডালিমের বাবার নামে চলছে সাভারে বিদ্যালয়!

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২, ০৭:৫৭ এএম

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মেজর ডালিমের বাবার নামে চলছে সাভারে বিদ্যালয়!

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার প্রতিনিধি

রাজধানীর সন্নিকটে সাভারের ভার্কুতা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মেজর ডালিমের বাবার নামে চলছে একটি বিদ্যালয়। 


বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮৪ সালে এই স্কুলেই বাবার কুলখানি করেন মেজর ডালিম। নিজ হাতে খাবারও পরিবেশন করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে মেজর ডালিমের পিতার নামের স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। ঢাকার সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নে অবস্থিত স্কুলটির নাম ‘মুশুরীখোলা সামসুল হক উচ্চ বিদ্যালয়’। এই সামসুল হক হলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর ডালিমের বাবা। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সামসুল হক ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।


জানা যায়, ১৯৬৮ সালে এই এলাকাটিতে একটি পতিতাপল্লী ছিল। পরে সেখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয়রা মিলে সেই পতিতাপল্লী উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই সূত্রেই সামসুল হকের শ্যালক ইমান আলী ২০০ শতাংশ জমি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩২ শতাংশ জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দান করলে সেই জমিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়। এর নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিমের বাবা সামসুল হকের নামে।


বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থী এসএম নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা  হলে তিনি জানান, ১৯৮৪ সালে তিনি এই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন ১৯৮২ সালে মেজর ডালিমের বাবা মারা যান। এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে মেজর ডালিম তার বাবা সামসুল হকের স্মরণে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিরাট এক কুলখানির আয়োজন করেন। কুলখানির দিন একটি জিপ গাড়িতে করে ডালিম ও তার ছোট ভাই কামরুল হক স্বপন এখানে এসে নিজেরা উপস্থিত থেকে প্রায় হাজার খানেক মানুষকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন। এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি, তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।


প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে ছিলেন সামসুল হকের পরিবারের সদস্যরা। প্রতিষ্ঠাকালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন মেজর ডালিমের মামা ইমান আলী। তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর এই দায়িত্ব নেন ইমান আলীর ছেলে লুৎফুল কবির। এরপরই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মেজর ডালিমের ভাই কামরুল হক স্বপন। পর্যায়ক্রমে আব্দুল গফুর নায়েব, জামাল উদ্দিন সরকার, ইউএনও, সালাউদ্দিন নাগরী, আব্দুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন।


এ দিকে ২০২০ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা বিল্লাল হোসেন ও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন প্রথমবারের মতো বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। তবে কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পাওয়ায় সেটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় সেখানেই থেমে যায় নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ে নাম পরিবর্তনের আবেদন করে স্কুল কমিটি।


বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৭৩০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছেন আর সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এখান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিদ্যালয়টিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২৩ জন। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুই জন।


বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়ে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বর্তমানে আমরা নামকরণ প্রস্তাব করেছি মুশুরীখোলা উচ্চ বিদ্যালয়। যার আদিনাম মুশুরীখোলা সামসুল হক উচ্চ বিদ্যালয়। নাম প্রস্তাব করার পরই আমরা অনুদান পেয়েছি।


প্রধান শিক্ষক এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, জাতির জনকের খুনি মেজর ডালিমের বাবার নামের স্কুলে আমরা শিক্ষকতা করি এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এমন অভিশপ্ত ও বিতর্কিত পরিবারের কোনো ব্যক্তির নামে স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকাটাও কলঙ্কজনক।


সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করছেন।


এইচএ /এএল



দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ