• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

কী নিষ্ঠুর নিয়তি! সবাইকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২, ০২:০৭ এএম

কী নিষ্ঠুর নিয়তি! সবাইকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার প্রতিনিধি

মা-মেয়ে দুজন চাকরি করতেন স্থানীয় পোশাক কারখানায়। মা ফাহিমা আক্তার পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মেয়ে রিয়া মনিকে আগলে রেখেছিলেন পরম যত্নে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সেই দায়িত্বের ভার কিছুটা গুটিয়েও নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের সেই সুখের সংসার আর দেখে যেতে পারলেন না ফাহিমা।’

আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন রিয়া মনি ও তার মা ফাহিমা আক্তার আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।  

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় নিহত পাঁচজনের একজন ফাহিমা আক্তার। এ ছাড়া মৃত্যু হয় রিয়ার শশুর রুবেল (৬০), খালা ঝরনা (২৮), খালাতো বোন জান্নাত (৬) ও খালাতো ভাই জাকারিয়ার (২)। তবে ফাহিমার মেয়ে রিয়া মনি ও তার স্বামী হৃদয় এ দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

নিহত ফাহিমা আক্তারের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার নওদত্ত গ্রামে। তার স্বামীর নাম আব্দুর রাজ্জাক। তবে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে জানা যায়।

রিয়া মনি আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার রেডিয়ান্ট গার্মেন্টসে চাকরি করতেন আর তার মা ফাহিমা আক্তার চাকরি করতেন একই এলাকার সিআইপিএল গার্মেন্টসে।

আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার স্থানীয় আশরাফ চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে সেখানকার দায়িত্বরত ম্যানেজার শফিকুল জানান, ৮ তলা এই বাড়িটির ছয় তলায় বড় মেয়ে রিয়া মনি আর মাদরাসা পড়ুয়া ছোট ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন ফাহিমা আক্তার। গত শনিবার (১৩ আগস্ট) এই বাড়ির ছাদেই অনুষ্ঠিত হয় রিয়া মনির বিয়ের ছোট্ট আয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘রিয়ার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই তাদেরকে নানা রকম সহযোগিতা করেছি। এমনকি শনিবার আমি নিজে উপস্থিত থেকে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন করি। গতকাল সকালে বউভাতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মিষ্টি হাতে রিয়া মনির মা ও খালাসহ বাকিরা আমার সামনে দিয়েই বের হয়ে যান। বিকালেই খবর পেলাম তাদের বহনকারী গাড়িটি অ্যাক্সিডেন্ট করে পাঁচজন মারা গেছেন। এটি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোর মুখ ভুলতে পারছি না।’

রিয়া মনির বাবা সম্পর্কে শফিকুল বলেন, 'তার বাবা তাদের সঙ্গে থাকতেন না। বিয়ে উপলক্ষে গ্রাম থেকে রিয়ার খালা ঝরনা তার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন আশুলিয়ায়। কিন্তু কী নিষ্ঠুর নিয়তি! তাদের সবাইকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে।'

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন, ‘গার্ডার চাপায় নিহত ফাহিমা আক্তার তার মেয়ে রিয়া মনিকে নিয়ে আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তাদের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা বাড়িওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে বর্তমানে তাদের বাসায় কেউ নেই।’

জেইউ

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ