
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২, ০৩:৪০ এএম
সরকার
তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে আর এর সাথে আমাদের বাসের মালিকরাও কিলোমিটারে ৪০ পয়সা ভাড়া
বৃদ্ধি করছে। আমরা পরিবহনের সাথে যারা জড়িত তারা নিরূপায় হয়ে নতুন নির্ধারিত ভাড়া
নিচ্ছি কিন্তু যাত্রীদের যে নানা কথা! কেউই নতুন ভাড়া দিতে চাচ্ছেনা। উল্টো তাদের
কথার উত্তর দিতে দিতে অতিষ্ঠ হয়েগেছি বাহে! টাইমের বাস প্রায় ফাঁকা বাস নিয়ে যেতে
হচ্ছে। নতুন ভাড়ায় যাত্রীর সংখ্যার কথা জানতে অনেকটা রাগান্বিত হয়ে এসব কথা বললেন
রংপুর টু নীলফামারী লাইনের ঝুমুর পরিবহনের কন্ট্রাকটার শাহীন মিয়া।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঠিক এক দিন পরেই বাস ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রোববার (৭ আগস্ট) থেকে নতুন এ ভাড়া কার্যকরের পর থেকেই ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন নতুন ভাড়ায় আগের চেয়ে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকের কম।
সোমবার
(৮ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, আন্তঃজেলার এই
বাস গুলোর নির্ধারিত সময়েও হাঁকডাকে যাত্রী না পেয়ে ফাঁকা ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে।
এসময় সিটি নিউজ ঢাকার সঙ্গে কথা হয় সোহেল পরিবহনের চালক নুরুল হুদার সাথে। নুরুল হুদা জানান, রংপুর বাস টার্মিনাল থেকে নীলফামারী ডোমার রুটে তেলের বর্ধিত দামে প্রায় পাঁচশত টাকার তেল অতিরিক্ত লাগছে। এর বিপরীতে কিলোমিটার প্রতি ৪০ পয়শা ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও সেটি নিতে পারছিনা যাত্রীদের নানান কথায়। এতে একেকটি যাত্রায় ৫০০ থেক হাজার টাকা ঘাটতি হচ্ছে বলেও জানান এই চালক।
এদিকে
হঠাৎ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রীদেরও যেন অভিযোগের শেষ নেই এই বাস টার্মিনালে। দিনাজপুর
ফুলবাড়ীগামী ফুলচাদ নামের এক যাত্রী পূর্বের ভাড়া ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা চাওয়ায়
কাউন্টারে উচ্চবাচ্য করতে দেখা গেছে। ফুলচাদের অভিযোগ গত দুই দিন আগে আসার সময় নিয়েছে
এক ভাড়া আর আজ যাওয়ার সময় বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এ সময় বাস কন্ট্রাকটার এর উপর অনেকটা ক্ষিপ্ত
হয়ে তিনি বাস থেকে নেমে যান।
রবিউল
নামে এক বাস যাত্রী বলেন, ‘বেতন না বাড়লেও গাড়িভাড়া বাড়ছে। সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে,
এখন বাড়তি ভাড়ার বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন পরিবহনমালিকেরা। এভাবে যাতায়াত
করে চাকরি করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।’
রাবেয়া পরিবহনের চালক আলামিন মিয়া বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর পর যাত্রীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা বেড়েই চলছে।অনেক যাত্রী আগের ভাড়াই দিতে চায়, তেলের দাম বাড়ানোর জন্য যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তা বুঝতেই চায় না।’
এদিকে
রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ছাড়াও মেডিকেল মোড়, মডার্ন মোড়, পার্কের মোড়, মাহিগঞ্জ
সাতমাথা, কলেজ রোড কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডসহ অস্থায়ী বিভিন্ন স্ট্যান্ডে খোঁজ নিয়ে
জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে দূরপাল্লার গণপরিবহনে বেশি ভাড়া নেওয়া
হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। একই
সঙ্গে জ্বালানি তেল নির্ভর ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ অন্যান্য পরিবহনে দাম
বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত,
গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম একলাফে লিটারে ৩৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে
সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে
৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়েছে।
পরদিন
পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দামের সঙ্গে সমন্বয় করে
নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,
দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ৪০ পয়সা। আর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ
মহানগরগুলোয় বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা।
এআরআই