• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

অসময়ে কানিয়া জাতের তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়েছেন দুই উদ্যোক্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২২, ০১:৪৫ পিএম

অসময়ে কানিয়া জাতের তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়েছেন দুই উদ্যোক্তা

মো. রাসেল, বরগুনা প্রতিনিধি

খামারের দুই পাশে সারি সারি ধান ক্ষেত, এরই মাঝে জালের ফাঁকে সারি সারি ঝুলছে বিভিন্ন আকারের ছোট বড় তরমুজ। এই অসময়ের তরমুজ দেখে অবাক হবেন সকলেই।বরগুনা জেলার সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন এর কালীরতবক গ্রামের আবদুল আলীম ও বনি আমিন নামের দুই যুবক ৮০ শতক জমিতে বর্ষাকালে এমন তরমুজের আবাদ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।


জানা যায়, গত বছর বর্ষাকালে ইউটিউব দেখে পরীক্ষামূলকভাবে ৮০ শতক জমিতে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন আলিম ও তার ছোট ভাইবনি আমিন। বাড়ির সামনের মাছের ঘেরের পাশে ৫০০ চারা রোপণ করেন তারা। এলাকার লোকজন এসব দেখে প্রথমে হাসিঠাট্টা করেন। দেখতে দেখতে আলীম ৫০০ গাছে দেড় হাজার তরমুজ পেয়েছেন তখন। গত বছর তাদের বিক্রি হয়েছিলো ৩ লক্ষ টাকা আর তাদের খরচ হয়েছিলো ৩৫ হাজার টাকা।



গতবছর তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ার পর এবার আবারও ৮০ শতক জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন এই দুই ভাই । মে মাসের শেষের দিকে খামারে ৩ জাতের ৩৫০ টি চারা রোপণ করেন তারা দুই ভাই। উপরে সবুজ ভিতরে হলুদ,উপরে হলুদ ভিতরো লাল ও ভিতরে সবুজ ভিতরে লাল এই ধরনের তরমুজের চার তারা রোপন করেছেন।চারাগুলো পরিচর্ষা করলে তা বেড়ে ওঠে। এরপর পুকুরের মধ্যে খুঁটি পুঁতে জাল দিয়ে লতাগুলো জালের ওপর তুলে দিলে সেগুলো বেড়ে উঠতে থাকে। বাংলাদেশে সচারচ হলুদ তরমুজ মানে কানিয়া জাতের তরমুজের চাষ হয় না বললেই চলে। তবে তারা দুই ভাই এই অসময়ে এই জাতের তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবার চোখে।


ইতিমধ্যে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন তারা দুই ভাই। এবার ৮০০ টি গাছে এক হাজার ২০০ তরমুজ আসবে বলে আশা করছে এই উদ্যোকতা দুই ভাই।প্রতিটি তরমুজের ওজন ২ থেকে তিন কেজি। যা কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।   এবার তরমুজ আবাদে ব্যয় হয়েছে দশহাজার টাকা। ১০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচের বিপরীতে ১লাখ ৮০  টাকার উপরে তরমুজ বিক্রি হবে জানান আলিম ও তার ভাই।



উদ্যোক্তা আলিম বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখে তরমুজ চাষের বিষয়টি আমার ছোট ভাই বনি আমিন আমাকে জানায়। আমিও বিষয়টি শোনার পরে আগ্রহী হই। এরপর দুই ভাই মিলে বাড়ির সামনে জমিতে তরমুজ চাষের জন্য পরিকল্পনা করি। এরপর জমি প্রস্তত করে তরমুজ আবাদ করি দুই ভাই। প্রথমে অনেকেই অসময়ে তরমুজ চাষ করা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করলে আমাদের সফলতা দেখে তারাই আবার আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। আমাদের দেখাদেখি এই এলাকার দুএকজন সল্প পরিসরে শুরু করেছেন।


উদ্যোক্তা আলিমের ছোট ভাই বনি আমিন বলেন, অসময়ে তরমুজ আবাদ করা যায়- এমন বিষয় ইউটিউব এ দেখে   আমি আর বসে থাকিনি সঙ্গে সঙ্গে বড় ভাই আলিমকে জানাই। এবং ভাইয়া সম্মতি দিলে দুই ভাই সেই কাজে নেমে পড়ি। কাজটা যখন প্রথম শুরু করি, তখন অনেকে হাসিঠাট্টা করেছে। ফলে আমাদের মনে এক ধরনের জেদ তৈরী হয়। সেই জেদের কারণেই বাবা-মা, দুই ভাইয়ের পরম যত্নে আমাদের সফলতা আসে।



তিনি আরও জানান, এবার দেড় হাজার তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। ওজনে দুই থেকে তিন কেজি। দেড় হাজার তরমুজ প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাড়ি থেকেই।


বরগুনা জেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়দুল আলম বলেন, সারাদেশে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া গেলে একদিকে যেমন তরমুজ সারাবছর পাওয়া যাবে, অন্যদিকে সকল তরমুজ চাষিরাও লাভবান হবেন। যারা এই জাতের তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী, কৃষি অফিস থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।



জেলা কৃষি অফিস থেকে আলিম ও বনি আমিনকে কোন সাহায্য করা হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবসময় তাদের দুই ভাইকে সাহায্য করে যাচ্ছি। তাদের কে কৃষি অফিস থেকে সার ঔষধ সহ বিভিন্ন  সামগ্রি দিয়েছি।


প্রসঙ্গত, বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালে প্রথম ভাসমান সবজি ও ফল আবাদ প্রকল্পের অধীনে প্রথম পরীক্ষামূলক ‘বেবি ওয়াটার মেলন’ বা ছোট তরমুজের আবাদ শুরু হয়। সেটা ছিল আকারে ছোট, দু–এক কেজি ওজনের এবং হাইব্রিড প্রজাতির। এরপর এই ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে গতবছর দুটি দেশি জাত—বারি তরমুজ-১ ও ২ উদ্ভাবন করেন। এই প্রজাতির তরমুজ প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সম্প্রসারণের উদ্যোক নেওয়া হয়েছে।


এইচএ 




দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ