কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় পূর্ব ধনীরাম ব্রিজ। কিন্তু উদ্বোধনের তিন মাস না যেতেই ব্রিজটি খালের পানিতে দেবে যায়। এতে ওই এলাকার ৬টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে যায়।
হাজারও অভিযোগ আর আবেদন প্রশাসনের কাছে পৌঁছালেও সেই আবেদন যেন ব্রিজটির মতই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। শুধু তাই নয়, এখানকার নতুন আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা ৮০টি পরিবারসহ স্থানীয়দের কাছে ব্রিজটির স্বপ্ন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে পারাপারের জন্য ড্রামের ভেলা তৈরি করেছেন।
জানা যায়, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬ শত ৫৬ টাকা ব্যয়ে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনীরাম গ্রামে তৈরি হয় এই ব্রিজটি। যার দীর্ঘ প্রায় ৪০ ফুট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৪ বছর ধরে ভেঙে পড়া সেতুটি প্রশাসন থেকে একাধিকবার পরিদর্শন করা হলেও পুনঃসংস্কার কিংবা নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে চলাচলের জন্য এলাকাবাসী অর্থ সংগ্রহ করে একটি ড্রামের ভেলা তৈরি করেন। এই ভেলায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হয় তাদেরকে। যার ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে পড়তে হয় চরম বেকায়দায়।
পূর্ব ধনিরাম গ্রামের খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এই ব্রিজটি নির্মাণ করার মাত্র ৩ মাসের মধ্যে ভেঙে পড়ে যায়। আজ প্রায় ৪ বছর ধরে এ অবস্থায় পড়ে আছে। দুঃখের কথা কি বলবো, আমাদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি দেখার যেন কেউ নেই। ব্রিজ তো পেয়েও পেলাম না। এখানকার রাস্তার অবস্থাও ভয়াবহ খারাপ। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো তাকে হাসপাতালে নিতে পারি না।’
মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ব্রিজটি হওয়ার কিছুদিন পড়েই ভেঙে গেছে। ব্রিজ ভাঙ্গার ৪ বছর হলো তবুও এখানকার মানুষের যাতায়াতের সমস্যার কোনো সমাধান হলো না। ছোট বাচ্চারা স্কুল ও মাদরাসায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। বাচ্চাদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে অভিভাবকরা খুবই দুঃশ্চিন্তায় থাকি।’
রমিছা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘ব্রিজটি হওয়ার পরে এক মৌসুমও ঠিকমতো চলাচল করতে পারলাম না। তাতেই ব্রিজটি ভাইঙ্গা চুইড়া পড়ে গেল। খুব একটা সমস্যায় পড়ছি আমরা।’
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম এলাকার ব্রিজটি নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই দেবে যায়। এতে করে জনসাধারণ পারাপার নিয়ে খুবই ভোগান্তিতে পড়েছে। টেকসই পরিকল্পনার অভাবে ব্রিজটির এই দুরাবস্থা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন, টেকসই পরিকল্পনা করে যেন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।’
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্থবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, ‘পূর্ব ধনিরাম গ্রামের খাল পাড়ে নতুন করে ব্রিজের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। যদি ব্রিজটি হওয়ার অনুমোদন দেয় তাহলে সেখানে ব্রিজ হবে। অনুমোদন না আসলে ব্রিজ হবে না।’
জেইউ